parbattanews

খাগড়াছড়ির থলিবাড়ীতে দুই পরিবারের দ্বন্দ্বে তিন শতাধিক পরিবার জিম্মি

ফলোআপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ির থলিবাড়ী এলাকায় কালীবন্ধু ত্রিপুরা ও  চিরঞ্জয় ত্রিপুরা পরিবারের দ্বন্দ্বে তিন শতাধিক পরিবার জিম্মি হয়েছে পড়েছে। আর এ দ্বন্দ্বে জেরে দুই পরিবারের প্রধানসহ তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছে পরিবারে বহু সদস্য। ইজ্জত হারিয়েছে নারীরাও। এর শেষ কোথায় জানে না এলাকাবাসী।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার থলিবাড়ীতে স্থানীয় ইউপি মেম্বার কালীবন্ধু ত্রিপুরা ও তার আপন ছোট বোন ভবেলক্ষী ত্রিপুরার জামাই চিরঞ্জয় ত্রিপুরা। এদের মধ্যে এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে লড়াই তাদের এ আধিপত্য বিস্তারের প্রভাব পড়েছে পাশ্ববর্তি দেবতা পুকুর ও পুনর্বাসন এলাকায়। ফলে ওই তিন এলাকার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পার করছে।

তারই জের ধরে ২০১৭ সালের ১১ মে রাত ৮টায় কালীবন্ধু ত্রিপুরা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর  হামলায় নিহত হয় ভগ্নিপতি চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ও তার ছেলে কর্ণ  জ্যোতি ত্রিপুরা। সে সময় চিরঞ্জয় ত্রিপুরার স্ত্রী ভবেলক্ষী ত্রিপুরা ও ছেলে কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরার স্ত্রী বিজলি ত্রিপুরা গুরুতর আহত হন। চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ও তার ছেলে কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরা প্রথমে গুলি ও পরে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, হামলার সময় সন্ত্রাসীরা নারীদের উপরও পাশবিক নির্যাতন চালায়। সে সময় চিরঞ্জয় ত্রিপুরার মেজো  ছেলে নীহার ত্রিপুরাও আহত হয়।

এ ঘটনায় চিরঞ্জয় ত্রিপুরার ছেলে নিহার ত্রিপুরা মামলা (মামলা নং ৪, তারিখ,১২.০৫.২০১৭) দায়ের করেন। মামলার পর কালীবন্ধু ত্রিপুরা দীর্ঘ দিন পলাতক থাকার পর আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়। পরে জেল থেকে মুক্তি পেলে কালীবন্ধু ত্রিপুরা ও তার পরিবারের সদস্যরা আর এলাকায় যায়নি। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর শুক্রবার(২৯ মার্চ) কালীবন্ধু ত্রিপুরা স্ব-পরিবারে চাঁদের গাড়ি ও মোটনসাইকেলে করে গ্রামে ফেরার পথে নিহার বিন্দু ত্রিপুরার নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী তাদের উপর ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় ইউপি মেম্বার কালীবন্ধু ত্রিপুরা।  হামলায় কালি বন্ধু ত্রিপুরার স্ত্রী রেমা প্রতি ত্রিপুরা(৫৭), ছেলে প্রদীপ ত্রিপুরা (২৪),যত্ন বিকাশ ত্রিপুরা(৩০), আত্মীয় অরুনা ত্রিপুরা(৩৫), রুপবালা ত্রিপুরা(৩৫), বিদ্যা রতন ত্রিপুরা(৩৫) ও উৎপল ত্রিপুরা(০৮)।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাগড়াছড়িতে পিতা ও পুত্রকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা ও দুই নারী আহত করাসহ অসংখ্য  ঘটনার নায়ক খাগড়াছড়ি সদর ইউপি সদস্য কালীবন্ধু ত্রিপুরা(শুক্রবার হামলায় নিহত) ছিলেন বহুরূপী। তিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও তিনি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জেএসএস(সন্তু) নেতা ছিলেন। তবে তার ছেলে যত্ন বিকাশ ত্রিপুরা ইউপিডিএফ’র(প্রসীত) রাজনীতির সাথে জড়িত।

স্থানীয়ভাবে পুরো পরিবারটি  চিহিৃত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত। তার দাপটে এলাকার সাধারণ ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষ সব সময় আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করেন। নির্বাচন এলে তিনি প্রার্থী হন। তবে জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়ে না তার। এলাকার মানুষকে জিম্মি করে তিনি নির্বাচিত হয়ে যান। যারা তাকে ভোট দেয়নি এমন মানুষগুলোকে তিনি ভোটের পরপরই নানাভাবে নির্যাতন করেন।

ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে তাকে ভোট দিয়ে থাকেন। তিনি মূলত অস্ত্র ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ। তিনি ইতি পূর্বে অস্ত্র ও ভারতীয় রূপীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পুত্র  যত্ন বিকাশ ত্রিপুরাসহ আটক হয়েছিলেন। আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বের হয়ে আবার একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সে মূলত: এলাকায় আতঙ্ক। তার রয়েছে একটি বিশেষ বাহিনী।

স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, ইতিপূর্বেও দুই পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বসে মীমাংসা করা হয়।

একটি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি ভোর রাতে  নিরাপত্তা বাহিনী খাগড়াছড়ির জেলা সদরের বিজিতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলি, ভারতীয়  রুপী ও  বিভিন্ন সরঞ্জামসহ খাগড়াছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কালীবন্ধু ত্রিপুরা(৪৫) এবং তার ছেলে যত্ন বিকাশ ত্রিপুরাকে  (২২)  আটক করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ৩ রাউন্ড গুলি, ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাক, বেশ কিছু ভারতীয় মুদ্রা, ও ১টি বাইনোকুলার উদ্ধার করে। বেশ কিছু দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পায় তারা।

২০১৭ সালের ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির মাইচছড়িতে চাঁদা আদায়কালে সাত রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি বিদেশি পিস্তলসহ কালীবন্ধু ত্রিপুরার ছেলে যত্ন বিকাশ ত্রিপুরাকে ফের আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী।

Exit mobile version