parbattanews

খাগড়াছড়ির যুবদল নেতা ইব্রাহিম খলিলের অকাল মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্নের উকি

খাগড়াছড়ি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিলের অকাল মৃত্যু নিয়ে জনমনে প্রশ্নের যেন অন্ত নেই। তার মৃত্যু পারিবাকি সমস্য্য নাকি বিপুল সম্পদ। ইব্রাহিম খলিলের মৃত্যু প্রায় সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও মানুষের মনে প্রশ্ন যেন থামছেই না। প্রতিদিন নিত্য নতুন প্রশ্ন ও তথ্য খাগড়াছড়ি শহরে ভাসছে।

ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ইব্রাহিম খলিল চিকিৎসাধীন ছিলেন চট্টগ্রাম এভার কেয়ার হসপিটালে। কিন্তু তার মৃত্যু সনদ দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিএসটিসি হাসপাতালের জনৈক চিকিৎসক। ফলে প্রশ্ন আরো গাঢ়ো হচ্ছে।

জানা গেছে, শালিকার বিয়েতে ফেনী যান ইব্রাহিম। (২৭ এপ্রিল) হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করে। তাকে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম এভার কেয়ার হসপিটালে। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে শনিবার ভোর রাত পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা ব্রেনে অপারেশন করে চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘন্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখে। এর মধ্যে ঘটে নানা ঘটনা।

একটি সূত্র জানায়, গত ৪ মে ভোর রাতে পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম এভার কেয়ার হসপিটালের চিকিৎসকদের কাছে খলিলকে মৃত বলে সনদ দাবি করেন। কিন্তু এভার কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল জীবত মানুষকে মৃত ঘোষণা করতে পারবো না। স্বজদের বাড়াবাড়ির এক পর্যায়ে এভার কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেকটা বাধ্য হয়ে যুবদল নেতা ইব্রাহিম খলিলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবিত অবস্থায় রেফার করেন। এভার কেয়ার হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল ইব্রাহিম খলিল তখনো জীবিত ছিলেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে। কিন্তু ইব্রাহিম খলিলকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে না নিয়ে তার স্বজনরা তাকে নিয়ে যায় সিএসটিসি হাসপাতালে। সেখানে ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে জনৈক চিকিৎসককে দিয়ে মৃত্যু সনদ নেয়া হয়।

স্থায়ী সূত্রগুলো বলছে, সদা হাস্যোজ্জ্বল ইব্রাহিম খলিল দলের বাইরেও সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় বিপুল সম্পদেরও মালিক। এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক ইব্রাহিম খলিল অন্তত ৩০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। অনেকের সাথে পার্টনারশিপের ব্যবসাও ছিল তার। তাছাড়া পারিবারিক সম্পত্তির মধ্যে অন্তত ৪০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়ার সম্ভনা ছিল যুবদল নেতা ইব্রাহিম খলিলের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার ভাই ও এক বোনের খলিলের পরিবার। পারিবারিক অমতে বিয়ে করার কারণে তিনি প্রায় ১১ বছর ধরে বাইরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহরের ইসলামপুরে খলিল তার বাবা ও চার ভাই মিলে একটি আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেন। কিছু দিন পর সে বাড়িতে ইব্রাহিম খলিল স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে উঠার কথা ছিল। কিন্তু পারিবারিকভাবে বাঁধা আসে। পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য তুমি বাসায় উঠতে পারলেও তোমার বউকে নিয়ে উঠতে পারবে না। এ নিয়ে আবারও পারিবারিক বিরোধ দেখা দেখা দেয়।

চট্টগ্রাম এভার কেয়ার হসপিটালের তার চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত জনৈক চিকিৎসককে প্রশ্ন করা হলে, ইব্রাহিম খলিল কেন ব্রেইন স্ট্রোক করলেন? উত্তরে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঐ চিকিৎসক বলেন, তার ব্রেইন স্ট্রোক করার মতো কোন উৎপাদন পাওয়া যায় নি। তিনি যদি ফিরে আসে তার মুখ থেকে জানা যাবে। কিন্তু ইব্রাহিম খলিল ফিরে আসেনি। তাই জানা গেলো না, ইব্রাহিম খলিলের স্ট্রোকের করার পিছনে আর কোন রহস্য লুকিয়ে ছিল কিনা। সে সব প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার আলাউদ্দিন ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করেন “খলিল ভাই মারা যাওয়ার ১ দিন আগে থেকেই ব্রেইন ডেথ অবস্থায় ছিল। মানে ব্রেইন অকেজো হয়ে গেছে, কিন্তু হার্ট সচল ছিল, ওষুধ এর মাধ্যমে । শ্বাস মেশিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছিল। এই অবস্থা থেকে মানুষের বেচে ফেরার সম্ভাবনা থাকেনা। তখন লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দিলে রোগীর হার্ট বন্ধ হয়ে যায়। খলিল ভাই মারা যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে কেন সিএসটিসি হাসপাতালে নিয়ে আসে আমিও বুঝতে পারছি না। তবে এভারকেয়ারে থাকলে একই ঘটনাই ঘটত। আল্লাহ খলিল ভাইকে জান্নাত দান করুক।

যুবদল নেতা ইব্রাহিম খলিলের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নানা প্রতিক্রিয়া ও তথ্য দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। অপেক্ষায় থাকেন, ভবিষ্যতে আরো রহস্য জানতে পারবেন যুবদল নেতা ইব্রাহিম খলিলের মৃত্যু নিয়ে।

গত ৭ মে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির স্মরণসভায় অনেক বিএনপির নেতা দাবি করেন, ইব্রাহিম খলিলকে হত্যা করা হয়েছে।

Exit mobile version