খাগড়াছড়ির রামগড় এতিম-অনাথ আবাসিক স্কুলটি কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আজ পরিত্যক্ত
মুজিবুর রহমান ভুইয়া :
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামগড়ের এতিম ও অনাথ বালক-বালিকাদের আবাসিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারী টাকায় নির্মিত জনহিতকর এ প্রতিষ্ঠানটি আজ সরকারী অবহেলার কারণেই পরিত্যক্ত।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, রামগড় পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের তৈছালাপাড়া এলাকায় প্রায় ১২ একর উচুটিলা ভূমির উপর নির্মিত এতিম ও অনাথ বালক-বালিকাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক দুটি হোস্টেল ভবন। বিভিন্ন কক্ষে ৬০ জন করে ১২০ জন এতিম ও অনাথ ছাত্রছাত্রী থাকার জন্য স্টিলের তৈরি ৬০টি দোতলা খাট, লেপ, বালিশ, মশারী, প্রতিজনের জন্য একটি করে পড়ার টেবিল ও চেয়ার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সাজিয়ে রাখা হয়েছে রান্নার হাড়ি পাতিল ও ক্রোকারিজসহ আরো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের জন্য তিনটি পৃথক টিনশেড আবাসিক কোয়ার্টার এবং কর্মচারীদের জন্য একটি ডরমেটরি ভবন রয়েছে। আধুনিক বাথরুম, পৃথক ডাইনিং রুম এবং কিচেন সহ নানা সুযোগ-সবিধা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানটি আজ অভিভাবহীন। কিন্তু এতিম ও অনাথ আবাসিক ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত থাকায় মূল্যবান বিভিন্ন মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
চারদিকে বন-জঙ্গলে ঢেকে গেছে আবাসিক প্রতিষ্ঠানটির পুরো এলাকা। আবাসিক কোয়াটারের টিনের ছাউনিগুলো ধ্বসে পড়ে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে ভবনটি এ অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলের এতিম-অনাথ বালক-বালিকাদের শিক্ষার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওয়াদুদ ভূঁইয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় তিনটি আবাসিক স্কুল নির্মাণ করেন। এজন্য সর্বমোট ১৫ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় হয়।
২০০৫ সালে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অনাথ ও এতিম আবাসিক স্কুলটি চালু হলেও বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর তার নিজ জেলার খাগড়াছড়ির রামগড়ের এই আবাসিক স্কুলটি উন্নয়ন বোর্ডেও বর্তমান কর্তাদের রোষানলে পড়ে আজও চালু হয়নি।
জানা যায়, ২০০৭ সালে রামগড় অনাথ-এতিম আবাসিক স্কুলের জন্য মাস্টার রোলে ৪ জন গার্ড, ২ জন টেবিল বয়, ২ জন আয়া, পিয়ন ও একজন ঝাড়–দার নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৮ সালে ৬০ জন বালক ও ৬০ জন অনাথ এতিম বালিকা ভর্তির জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে জমা নেয়া হয়। বিগত বিএনপি সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর এই অনাথ ও এতিম আবাসিক স্কুলটির ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়াও থেমে যায়।
এদিক দুই-আড়াই বছর ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে অতিকষ্টে দিন পার করছেন তারা। এবিষয়ে আবাসিক স্কুলে নিয়োজিত কর্মচারী মো: অহিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আর পারি না, কত দিন বিনা বেতনে চাকরি করবো। স্কুলের চাবি ফেরত দিয়ে দায়িত্ব ছাড়তে চাইলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে রামগড় জোনের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল ওহাব রামগড় অনাথ ও এতিম আবাসিক স্কুলটিতে জোনের অর্থায়নে কারিগরী ও ইলেক্ট্রনিক কার্যক্রম চালু করার অভিমত ব্যক্ত করলেও সে প্রক্রিয়াও বেশীদুর এগুয়নি। ফলে পরিত্যাক্তই রয়ে গেছে সরকারের কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে এ জনহিতকর প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে রামগড়ের সাংবাদিক রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা বলেন, সরকারী টাকায় নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি চালু না হওয়ায় সরকারের মোটা অংকের অর্থেও অপচয়ই হয়নি একটি স্বপ্নেরও মৃত্যু হয়েছে। শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে খাগড়াছড়ির এতিম-অনাথ শিশুরা। তিনি বলেন, একই প্রকল্পের অধীনে নির্মিত রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুটি প্রতিষ্ঠান চালু হলেও খাগড়াছড়ির রামগড়ের প্রতিষ্ঠানটি চালু না করা সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছুইনা।
এদিকে রামগড় উপজেলার সুশীল সমাজ ও সাধারণ জনগণ অবিলম্ভে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত রামগড় এতিম-অনাথ আবাসিক স্কুলটি পূর্ণ সংস্কারসহ চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছে।