parbattanews

খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের প্রকৃত ঠিকাদাররা গুটাচ্ছে ব্যবসা

এক সময় ছিলেন কোন না কোন ঠিকাদারের সাইড মিস্ত্রী। এখন তারাই ঠিকাদার। কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে গোপনে সব কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন গোপনে। টেন্ডারের আগে কাজও করে বিলও উত্তোলন করে ফেলেন। ঠিকাদারী ব্যবসায় সাইড মিস্ত্রিদের দাপটে প্রকৃত ঠিকাদাররা এখন তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন। এ চিত্র খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগে।

ঠিদাদাররা প্রতি বছর সরকারী রাজস্ব দিয়ে লাইসেন্স নাবায়ন করেন কিন্তু কাজ পান না, বা কোন কাজ লটারিতে উঠলে দেখা গেছে, কাজটি কোন সাইড মিস্ত্রি আরো ৬ মাস আগে করে ফেলেছেন। এমন কি বিলও উত্তোলন করে ফেলেছেন। এবারের জুন ক্লোজিং- এ চিত্র ধরা পড়েছে খাগড়াছড়ি গণপূর্ত অধিদপ্তরে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি আখিঁ কনস্ট্রাকশন-এর মালিক মো. মহিউদ্দিন খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর পরামর্শে আগাম কাজ করে ফেলেন খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের । প্রাক্কলিত ব্যায় ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু জুন ক্লোজিং-এ টেন্ডারে লটারিতে কাজ পেয়ে যান ঠিকাদার মোহাম্মদ নুর নবী।

 

ঠিকাদার মোহাম্মদ নুরু নবী বলেন, তিনি টেন্ডারে ১৪ গ্রুপে অংশ নিয়ে লটারিতে একটি কাজ পেয়েছেন। কিন্তু লটারিতে কাজ পাওয়ার পর জানা গেছে ঐ কাজটি মহিউদ্দিন আরো আগে করে ফেলেছেন। অপর দিকে মহিউদ্দিন বলেন, আমি গণপূর্ত বিভাগকে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি। সরকারি রাজস্ব কর্তনের পর প্রাপ্ত বিল প্রায় ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আমি ইতিমধ্যে চেকও দিয়ে দিয়েছি।আমি ঠিকাদার নুর নবী ১০ শতাংশ লাভে ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেও নুর নবী দাবী করছেন ১ লাখ টাকা। এ নিয়ে তিন দফা বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি।

অপর দিকে ঠিকাদার নুর নবীর দাবী, কাজ যেহেতু আমি পেয়েছি সেহেতু মহিউদ্দিন কিছু লাভ দিয়ে দেবো। তিনি বৈঠক হওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি আগে কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিনা ও গণপূর্ত বিভাগকে কাজ বুঝে নিয়েছে কিনা দেখবো। তারপর মহিউদ্দিনকে তার লভাংশ বুঝে দেবো। অপর দিকে মহিউদ্দিনের বক্তব্য গণপূর্ত বিভাগের কাজে ১০ শতাংশের বেশি লাভ করা যায় না। তারপরও ৫০ হাজার দিতে রাজি হয়েছি। বৈঠক হয়নি সে কথা সঠিক নয়, বরং ঠিকাদার নুর নবী বৈঠকে দাবী করেছেন,কাজটি আসলে তার নয়, করেছেন অন্য দুই ঠিকাদার।

খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগ একাধিক গ্রুপের টেন্ডার আহবানে ঠিকাদার নজরুল ইসলাম ১৩ গ্রুপের সিডিল কিনে ড্রপ করে একটি গ্রুপের কাজ পান নজরুল ইসলাম। কাজটি ছিল প্রায় ৮ লাখ টাকার জেলা ও দায়রা জজের অফিস সংস্কার। কিন্ত আরো একজন ঠিকাদার দাবী করেন, তিনি এই কাজটি আরো ৬ মাস আগে প্রায় ৪০ ভাগ সম্পন্ন করেছেন। এ নিয়ে দুই ঠিকাদারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে নজরুল ইসলাম দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে কাজটি সেরে দেন।

খাগড়াছড়ি জিয়ানগর অবস্থিত টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট ভবনের সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ ছিল ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৩ টাকা। কিন্তু ১০ শতাংশ লেস দিয়ে ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩৬.০৬৯ টাকায় কাজটি পান মেসাস বসুন্ধরা হাউজ বিল্ডাস প্রতিষ্ঠান।তবে খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর পরামর্শে জনৈক এরশাদ টেন্ডারের আগেই কিছু কাজ করে ফেলেন। যা চলমান রয়েছে। কিন্তু জুন ক্লোজিং-এ টেন্ডার হলে দেখা জটিলতা। অবশেষে জনৈক আওয়ামীলীগের এক নেতার সুপারিশে কাজটি এরশাদকে করতে বলা হলে আওয়ামী লীগ মহলে তোলপাড় শুরু হয়।

একইভাবে খাগড়াছড়ি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংস্কারের কাজটি পান খাগড়াছড়ি শহরের কলাবাগানের মো. মাসুদুর রহমান মাসুম । যার প্রাক্কলিত ব্যায় ছিল ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭শত ৯৯.৮৮৩ টাকা। কিন্তু আরো একজন ঠিকাদার ঐ কাজটি আগাম করে রেখেছে বলে দাবি করায় এক লাখ টাকায় দফারফা হয়।

একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদার বাপ্পি মজুমদার এই জুন ক্লোজিং-এ ৭টি কাজ পেয়েছে। তারমধ্যে আগেই ৫টি কাজ করে রেখেছেন এবং বিলও উত্তোলন করে ফেলেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে ঠিকাদাররা কাজ পেয়েও নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুরোধে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

এ হচ্ছে খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের কয়েকটি দুর্নীতির চিত্র। আগাম কাজ করিয়ে জুন ক্লোজিং-এ আবার তাড়াহুড়া করে টেন্ডার দেওয়ার কারণে প্রতিটি কাজে এমন জটিলতা দেখা দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের সম্মিলিত লাইসেন্সের ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, খাগড়াছড়ির সবগুলো সরকারি দপ্তরে নতুন অর্থ বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ মে পর্যন্ত টেন্ডার হয়। কিন্তু খাগড়াছড়ি গণপূর্ত অধিদপ্তরে সারা বছর পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়ে গোপন কাজ করে ফেলেন আর জুন মাসের শেষ সপ্তাহে এসে তাড়াহুড়া করে টেন্ডার আহবান করে।

ফলে কোন ঠিকাদার টেন্ডারে কাজ পাওয়ার পর দেখা গেছে,কাজটি আগে করা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছর ৪০ হাজার টাকা সরকারি রাজস্ব দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করি। কিন্তু কোন কাজ পায় না। তাই এখন টেন্ডারে অংশ নেওয়া ছেড়ে দিয়েছি।

Exit mobile version