parbattanews

খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে জনসংযোগে শিশুরাও

৬ মাসের ফারজানা ইসলাম, ৩ মাসের আরিফা জান্নাত, ৫ বছরের কাউসার ইসলাম ও ৩ বছরের শিশু সায়মন। এরা মায়ের কোলে কিংবা মায়ের হাত ধরে পছন্দের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট ভিক্ষা করছেন। শুধু ফারজানা, আরিফা, কাউসার ও সায়মন নয়, প্রতিদিন এধরণের অসংখ্য শিশু মেয়র কিংবা কাউন্সিল প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইছেন।

আর এমন নির্লজ্জ চিত্র দ্বিতীয় দফায় আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে প্রচারণায়। কি জগন্য-লজ্জাজনক। কারা দায়ি এমন পরিস্থিতির জন্য? লজ্জা কি জনসেবার নাম করে যারা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের? না যারা কালো টাকা বিলিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে মা-বোনদের তাদের অবুজ শিশুদের কোলে নিয়ে গণসংযোগে নামতে বাধ্য করেছেন তাদের?

আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে খাগড়াছড়ি পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী ইব্রাহিম খলিলের বাইরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নৌকা প্রতীক বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো: রফিকুল আলম (মোবাইল ফোন) ও জাতীয় পাটির প্রার্থী (লাঙ্গল) ফিরোজ আহমেদ।

জাতীয় পাটির প্রার্থীর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া না গেলেও অপর তিন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে প্রতিদিন পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি শত শত নারী কর্মী স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামছেন গণসংযোগ কিংবা জনসংয়োগে। তাদের দৈনিক বেতন হিসাবে প্রার্থীরা দিচ্ছেন কোন প্রার্থী ৩শত টাকা, কেউ ৫শ আবার কোন প্রার্থী ৭শত টাকা। আর সে টাকার লোভে মাঠে নামছেন সদ্য ভূমিষ্ট শিশুকে কোলে নিয়ে মায়েরাও।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভোটের মাঠে জনসংযোগে নারী কর্মীরা আবার একই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন না। কারণ তাদের প্রচারণা একদিন পর পর। তাই আজ নৌকা,কাল ধানের শীষ এবং পরশু মোবাইল ফোন প্রতীকের পক্ষে তারা মাঠে নামেন। মূলত: খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি চলছে।

পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের ব্যায় তিন লাখ ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ৫০ হাজার টাকা হলেও প্রত্যেক প্রার্থী প্রতিদিনই ব্যায় করছে পুরো নির্বাচনের ব্যায়ের চেয়েও দ্বিগুন। নির্বাচনের আচরণবিধির ধারেকাছেও নেই কোন প্রার্থী। দুপুর ২টার পর মাইকে প্রচারণার কথা থাকলেও সকাল থেকে রিক্সা কিংবা পিকআপে মাইক লাগিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে মিছিল করছে কতিপয় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিদিনই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সংবাদ প্রকাশ হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বিকার।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এ পর্যন্ত (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত এক মেয়র প্রার্থী ও এক কাউন্সিলর প্রার্থীসহ তিনজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে। অথচ শহরের বিভিন্ন সড়কে এখনো ঝুলছে প্রার্থীদের বিশাল বিশাল ব্যানার।

এ পর্যন্ত নির্বাচন কতটুকু অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত হবে, ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এ নিয়ে শংকা রয়েছে।

এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার রাজ আহমেদ বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন থেকে নির্বাচনী আচরণ রক্ষার জন্য তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে। তার দাবি নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য যা করার দরকার সবই করা হচ্ছে। কোন অপশক্তিকে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবো না। আমরা নির্বাচনে জিরো টলারেন্স নীতিতে শেষ পর্যন্ত থাকবো।

তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে ইউপিডিএফ বলি, কিংবা রাজনৈতিক সন্ত্রাসী, সংস্কারপন্থী বলি এধরনের বহু গোষ্ঠী-সম্প্রদায় আছে। যারা তাদের স্বার্থ আদায়ে কাজ করার অপচেষ্টা, অপপ্রচার বা অপকর্ম করতে পারে। এ সব অপশক্তি কোন ভাবেই যাতে প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনকে তাদের অনুকুলে নিতে না পারে তার জন্য আমার জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি।

কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। শুরু থেকে তারা শো-ডাউন করছেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে একাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। বিভিন্ন সড়কে তাদের বিশাল আকৃতির ব্যানার ঝুলছে। বার বার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।

Exit mobile version