খাগড়াছড়ি বিএনপিতে গৃহদাহ তুঙ্গে : সংকট নিরসনের আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে জেলা বিএনপির একাংশ

 
Untitled-1
 
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :
দীর্ঘদিন আভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে দুরে থাকার পর খাগড়াছড়ি বিএনপিতে গৃহদাহ এখন আবারো তুঙ্গে উঠেছে। সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনের পর অবারো খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপিতে আভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। আর এ নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনের আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জেলা বিএনপির একাংশ।
 
বিএনপিতে ওয়াদুদ ভুইয়ার একক কর্তৃত্ব, সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদান আর জয়-পরাজয়সহ কোন্দলের জন্য ওয়াদুদ ভুইয়াকে দায়ী করে জেলা বিএনপির একাংশ নালিশ নিয়ে ঘুরছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে। জানা গেছে, ১৯ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ির ৬ উপজেলার প্রার্থী মনোনয়ন, নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে কেন্দ্র করেই জেলা বিএনপিতে নতুন মেরুকরণের সুচনা হয়।
 
এ মেরুকরণের অংশ হিসেবেই ওয়াদুদ ভূইয়া বিরোধী বলয়ে নিজেদের ঐক্য গড়ে তোলেন তিন মেরু’র তিন নেতা, সমীরণ দেওয়ান-বেলায়েত হোসেন ভুইয়া এবং মনীন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এ তিন নেতা খাগড়াছড়িতে ওয়াদুদ বিরোধী সব নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে গত বুধবার (১৯ মার্চ) দিনভর দেখা করেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আ স ম হান্নান শাহ এবং দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের সাথে। এতোদিন এলাকায় না থেকেও কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে ওয়াদুদ ভূইয়াই ছিলেন একক নেতা বা অবিকল্প। কিন্তু দলীয় কর্মকান্ডে তাঁর একক সিদ্ধান্ত আর আকাশচুম্ভী জনপ্রিয়তায় অন্যরা ছিলেন তটস্থ।
 
কিন্তু গত বুধবার ঢাকায় ওয়াদুদ বিরোধী বলয়ের তিন শীর্ষনেতা এবং অন্যান্যদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে দুই কেন্দ্রীয় নেতার সাথে সাক্ষাতের ঘটনায় পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সকলের প্রশ্ন একটাই কী ঘটতে যাচ্ছে খাগড়াছড়ি বিএনপিতে?
 
জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত জেলার সাত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত দুই বিজয়ী চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত করে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় খাগড়াছড়িতে ওয়াদুদ ভুইয়া বিরোধী বলয়ের তিন নেতার নেতৃত্বে একই কায়দায় ভিন্ন উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এর সাথে সাক্ষাত করার বিষয়টিকে খাগড়াছড়ি বিএনপির রাজনীতিতে নতুন কোন ইঙ্গিত কিনা তাও ভাবছে রাজনীতি বোদ্ধারা।
 
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহী নেতাদের মূল অভিযোগ, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপিতে অগণতান্ত্রিক বহিস্কার, আ‘লীগের সাথে টেন্ডার ভাগাভাগি ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারী জেলা বিএনপি‘র সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীন চন্দ্র চাকমাকে বহিস্কারসহ বিএনপি‘র অস্তিত্ব রক্ষায় ২০০১ সালের পরে বহিস্কৃত সকল নেতা-কর্মীদের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে জেলা বিএনপি‘র একাংশের এই নেতা-কর্মীরা।
 
এসময় ওয়াদুদ ভুইয়া বিরোধী বলয়ের নেতারা খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি প্রবীণ চন্দ্র চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মিল্লাত ও সহ-সাংগঠনিক এম এন আবছারসহ দলের কতিপয় নেতা জেলা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, তৃণমূলের নেতা কর্মীদের সাথে অসদাচরণ, রাজপথ ছেড়ে টেন্ডারবাজী করে তা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা এবং মোটা অংকের অর্থ নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন এবং অর্থের বিনিময়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের মাঝে দলীয় পদ পদবী বন্টনসহ অভিযোগের পাহাড় তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
 
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাতের সত্যতা স্বীকার করে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মনীন্দ্র লাল ত্রিপুরা পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমরা দলের সাংগঠনিক শক্তিমত্তা এবং বৃহত্তর স্বার্থে দুই কেন্দ্রীয় নেতার সাথে সাক্ষাত করেছি। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দেইনি।
 
এ বিষয়ে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভুঁইয়া পার্বত্যনিউজকে বলেন, দলে কোন বিরোধ নাই, যারা ঢাকায় এসে নেতাদের সাথে দেখা করেছে এরা মূলত অনেকেই দলের লোক না। কেউ এলডিপির লোক এবং এলডিপির বিভিন্ন কমিটিতে তারা আছে। আর কেউ কেউ বিভিন্ন সাংগঠনিক অপরাধের কারণে দল থেকে বহিস্কৃত। ২/৩ জন আছে যারা নামমাত্র বিএনপি করে। দলের কোন রকমের কর্মকান্ডে তারা নাই। যেমন ধরুন, আজকের দলীয় কর্মসূচি ডিসি অফিস ঘেরাও, সেখানও তারা নেই।
তিনি বলেন, আপনি আজকের কর্মসূচির ছবিগুলো দেখলেই বুঝবেন তারা বিএনপি করে কিনা? তারা মূলত নিজে নিজে বিএনপি কিন্তু কোনপ্রকার দলীয় কর্মকান্ডে মাঠে বা মঞ্চে কোথাও দলের কাজে নেই, আছে শুধু আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে দলের ক্ষতি করা এবং দলীয় নেতা কর্মীদেরকে হয়রানী করা, সরকারী দলকে দিয়ে হামলা মামলা করানোর ছলে পলিটিক্স করা। এদের সাথে জনসম্পৃক্ততা নেই। গত পাঁচ বছরে তারা কোন আন্দোলন কর্মসূচিতেই ছিলনা অথচ দলের অন্য সবাই মামলা হামলার স্বীকার।
 
ওয়াদুদ ভুইয়া বলেন, আমরা এদেরকে দলের লোক মনে করি না। এরা দলের বিরোদ্ধে ষড়যন্তকারী মাত্র। এরা ঢাকায় আসলে বিএনপির ত্যাগী নেতা সেজে যায়, আর এলাকায় থাকলে সরকার দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীর ভূমিকায় থাকে।
তাছাডা তারা সদ্য হয়ে যাওয়া ও চলমান উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে বরং তারা কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে, কেউ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে-করছে। সেই জন্যই তাদের মধ্যে কেউ কেউ দল থেকে বহিস্কার হয়েছে। তারা মূলত ঢাকায় এসে তাদের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। আর তাদেরকে নির্দোষ দাবী করেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের এসব অন্যায্য দাবী গ্রহণ করেননি বলেও জানান তিনি।
 
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওয়াদুদ ভূইয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, এটা বড়ো দলে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। দলীয় সংসদ সদস্য পদের মনোনয়ন এবং ক্ষমতায় আসলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং শরণার্থী পূর্নবাসন টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান পদের লবিং করতেই তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁরা আমার ও ওয়াদুদ ভূইয়ার বিরুদ্ধে আলাদাভাবে আলাদা রকমের অভিযোগ করেছেন, এটাও শুনেছি। তবে বিষয়টি একেবারেই অভ্যন্তরীন।
 
উল্লেখ্য, এই সাক্ষাতে তিন মেরু’র তিন শীর্ষ নেতার পাশাপাশি মাটিরাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র নাসির আহাম্মদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক বাতায়ন দেওয়ান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইদুল ইসলাম বাবুল, খাগড়াছড়ি জেলা যুবদলের সভাপতি মো: আব্দুস সালাম, মানিকছড়ি বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা এস এম রবিউল ফারুকসহ ওয়াদুদ বিরোধী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
 
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন