parbattanews

খুটাখালীর পীর হাফেজ মাওলানা আবদুল হাই এর মৃত্যু, চিকিৎসকের ভাষ্য ও আমার অনুভূতি…

আলীকদম প্রতিনিধি:

গোধুলী লগ্নের শান্ত বেলায় ফুটা কোন ফুল বা নীল অপরাজিতার মতোই সংক্ষিপ্ত মানব জীবন। সূর্যেও প্রদীপ্ত আলোয় কিংবা চাঁদের উজ্জ্বল আভায় ফুটা ফুল যেমনি বিশেষ সন্ধিক্ষণে ঝরে গিয়ে বিলিয়ে যায় অতৃপ্ত সৌরভ; ঠিক তেমনি কিছু মানুষ পৃথিবীতে রেখে যায় ব্যক্তিত্বের পুষ্পিত গৌরব।

সূর্যের প্রদীপ্ত আলোয় লক্ষ তারা হারিয়ে গেলেও যেমনি শুকতারাটি হারিয়ে যায় না, তেমনি কিছু মানুষের মায়াবী চেহারা স্মৃতির আকাশে ভেসে থাকে আমরণ। তাদের স্মরণই গতি, বিস্মৃতি হলো নিস্তব্ধতা।

বলছিলাম, চকরিয়ার খুটাখালীর পীর খ্যাত প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা আবদুল হাই সম্পর্কে। এ মানুষটি এখন এই পৃথবীর মায়া ত্যাগ করেছেন গত রবিবার দিবগত রাতে। (ইন্নালিল্লাহি….রাজেউন)। তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের একজন আলোক সমধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। দীর্ঘকাল ধরে ইসলামের সুবিমল জ্যোতি বিকিরিণ করে গেছেন সাধারণ মানুষের মনে।

রবিবার (২১ জানুয়ারি) আলীকদম বাজার ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে তাঁর সভাপতিত্ব করার কথা ছিলো। রবিবার বিকেলে তাঁকে বহনকারী নোহা গাড়িটি যখন আলীকদম বাজার অতিক্রম করছিলো তখন আমি বাইক নিয়ে বিপরীত দিক হতে আসতেছিলাম। তখন হুজুরকে গাড়ির ফ্রন্টসিটে বসা দেখেছিলাম। আমার কাছে মনে হলো যেন, তাঁর চোখে মুখে এক স্বর্গীয় উজ্জ্বল আভা!

তাঁর গুণগ্রাহীরা জানান, আলীকদমে সীরাত মাহফিলে আসার আগে থেকেই হুজুর কেবলা অসুস্থতা বোধ করছিলেন। তারপরও আল্লাহর এ প্রিয় বান্দার বিশ্রামের সুযোগ কোথায়! এ অক্লান্ত ধর্মগুরু যেন আল্লামা ইকবালের ভাষায় বলেন গেলেন-

ওয়াক্ত ফুসরত হে কাঁহা আভিবাকী, নূরে তাওহীদ কাএতমামবাকী হে! (নহে সমাপ্ত কর্ম তোদের, অবসর কোথা বিশ্রামের? উজ্জ্বল হয়ে ফুটেনি এখনো সুবিমল জ্যোতি ইসলামের)

বাস্তবিকই তাই! অসুস্থ শরীর নিয়েই তিনি আলীকদম বাজারের সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলে আসলেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুম ছিলো ভিন্ন।

বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাছির উদ্দিন সওদাগর জানান, ‘হুজুর আমার বাসায় রবিবার বিকেল থেকে অবস্থান করছিলেন। রাতে মাহফিলে তাঁর সভাপতিত্ব করার কথাছিলো। কিন্তু হুজুর অসুস্থতা বোধ করায় মাহফিল স্থলে আসতে পারেননি। তাঁর শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেলে রাত সোয়া একটার সময় বাসা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়।

২১ জানুয়ারি দিবাগতরাত সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাত ২টা ৪০ মিনিটে আলী কদম সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজেউন)। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এক শুভাকাঙ্খীদের ফোন পেয়ে রাত তিনটার দিকে আমি হাসপাতালে ছুটে গিয়ে মরহুমের নিথর দেহখানি দরে অন্যান্যদের সাথে এ্যাম্বুলেন্সে তোলার সৌভাগ্য লাভ করি।

তাঁর মৃত্যু পরপরই আমি হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মো. আমিনুল ইসলামের সাথে মরহুমের মৃত্যু পূর্ববর্তী অবস্থা জানতে চাই। তিনি বলেন, ‘রাত সোয়া একটার দিকে তাঁকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। এ সময় হুজুরের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাই তাঁকে অক্সিজেন, স্যালাইন ও ইনজেকশান দেওয়া চেষ্টাকালে তিনি ইশারায় বারবার এসব সরানো তাগাদা দেন। এক পর্যায়ে তিনি কথা বলে উঠে বসতে চান। তাকে যথারীতি বসানো হয়। পরক্ষণে উত্তরমুখি হয়ে শোয়ে যান। এ সময় তাঁর শরীর নিস্তেজ হতে থাকে এবং তাঁকে অস্ফুষ্ট স্বরে কিছু পড়তে দেখা যায়। রাত ২ টা ৪০ মিনিটের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন’।

স্বভাবতই মূমুর্ষূ রোগী সর্বশেষ চিকিৎসা সেবা পেতে চান। কিন্তু ডাক্তারের কথায় বুঝা গেলো মরহুম পীর সাহেব বুঝি আল্লাহর পক্ষ থেকে ডাক শুনতে পেয়েছিলেন-

“ইয়া আইয়ুতুহান নাফসুল মুতমায়িন্না ইরজিয়ি ঈলা রাব্বিকা রাদিয়াতাম মারদিয়ায়, ফাদ্খুলী ফিইবাদি ওয়াদখুলী জান্নাতী”। ওহে প্রশান্ত আত্মা! প্রত্যাবর্তন  কর তোমার রবের দিকে সন্তোষ সহকারে, আর তিনি তোমাদের প্রতিসন্তুষ্ট। অতএব, আমার বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর (সুরা আল ফজর)।

Exit mobile version