খয়রাতি সাহায্যের সরকারী চাউল বিতরণ না করে কালো বাজারে বিক্রি করে দিলেন জনপ্রতিনিধিরা

Rangamati BGF Rice-07.08.13

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
সরকারি খয়রাতি সাহায্যের চাউল উপকাভোগীদের মাঝে বিতরণ না করে কালো বাজারে বিক্রি করে দিলেন জনপ্রতিনিধিরা। বুধবার রাঙামাটি শহরের লঞ্চঘাটে দেখা যায় ভিজিএফ’এর প্রায় চার’শ বস্তা চাউল। দেশীয় ইঞ্জিনবোটে ভর্তি করে আনা এসব চাউলের ব্যাপারে জানতে চাইলে বোট চালক কালাম জানায়, নানিয়ারচরের চাউল ব্যবসায়ি দিদার রাঙামাটি শহরের স্থানীয় চাউল ব্যবসায়ি তপনের জন্য এসব চাউল পাঠিয়েছে বলে জানায়। কিছুক্ষণ পরে তপনকে ডাকার নাম করে ঘটনাস্থল থেকে সে সটকে পড়ে।
এদিকে দুইটি দেশীয় ইঞ্জিন চালিত বোটেরসভেতরে বড় আকারের পলিথিন ও তেরপাল দিয়ে ঢেকে রাখা প্রায় চার’শ বস্তা চাউলের মধ্যে আতপ এবং সিদ্ধ দুই ধরনের চাউল থাকতে দেখা গেছে।
বোট চালক জানায়, নানিয়ারচর উপজেলার ক্ষারিক্ষং ইউপি চেয়ারম্যান সুশীল কুমার চাকমা এসব চাউল নানিয়ারচরের ব্যবসায়ি দিদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, আর দিদার এগুলো রাঙামাটি শহরের চাউল ব্যবসায়ি তপন বাবুর কাছে বিক্রি করেছে। এদিকে তপন বাবু অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, আমার নাম বিক্রি করে একটি অসাধু মহল নিজেদের অপকর্ম অন্যের ঘাড়ে চাপিঁয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে নানিয়ারচরের চাউল ব্যবসায়ি দিদারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে কল রিসিভ করে, বিষয়টি সম্পর্কে কোনো কিছু জানার আগেই তিনি বলতে লাগলেন এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, আমি চট্টগ্রাম অবস্থান করছি, রাত দশটার সময় আমি রাঙামাটি এসে আপনার সাথে কথা বলবো।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, আমার কাছে এব্যাপারে কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। তারপরও আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোজঁখবর নিচ্ছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নিব।
এদিকে বোট চালক ও নানিয়ারচরের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে,  সরকারের বিশেষ বরাদ্ধের খয়রাতি প্রায় ১৮ মে.টন চাউল স্থানীয় সুবিধাভোগিদের মাঝে বিতরণ না করে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সুশীল কুমার চাকমা কালো বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন । এব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সুশীল কুমার চাকমা জানান, আমি বরাদ্ধ পেয়েছি সর্বমোট বিশ মে.টন চাউল যার সবগুলোই সিদ্ধ। আমার এলাকায় বাঙ্গালী লোকাজন নাই বললে চলে, তাই হয়তো সুবিধাভোগিরা সিদ্ধ চাউল খেতে পারবে না বলে ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তবে আমি ও আমার মেম্বাররা এসবের মধ্যে জড়িত নই, এছাড়া নিজে দাড়িঁয়ে থেকে এসব চাউল সুবিধাভোগিদের কাছে বিতরণ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে চেয়ারম্যানের দাবির সাথে সরেজমিনে গিয়ে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের জেটি ঘাটে অবস্থান করা দেশীয় ইঞ্জিন বোর্টে রক্ষিত প্রায় ৪’শ বস্তা চাউলের মধ্যে আতপ ও সিদ্ধ দুই রকমের চাউলই বিদ্যমান রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে মোবাইলে জানতে চাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই জেটি ঘাট থেকে বোটসহ চাউলগুলো অজ্ঞাত স্থানের দিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মাত্র এক ঘন্টার ব্যবধানে হাওয়া হয়ে গেছে বোটসহ প্রায় ৪’শ বস্তা খয়রাতি চাউল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন