গণজমায়েতে ঝুঁকিপূর্ণ বান্দরবান বাজার, রেড জোন হলেও সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউ

fec-image

দেশের সব জেলার মত করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান। ইতোমধ্যে বান্দরবানের পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং করোনা আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচ হাসপাতলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারপরে পরে আক্রান্ত হয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম, এছাড়া জেলা-উপজেলা মিলে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে করোনাভাইরাস।

তাই বান্দরবান জেলাকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করার প্রেক্ষিতে বান্দরবান জেলা ও রুমা উপজেলা লকডাউন ও রেড জোনের আওতায় আনা হয়।

উল্লেখ্য যে, ৯জুন মঙ্গলবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম হোসেনের ফেসবুক স্টেটাসের তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।

তিনি জানিয়েছেন, বুধবার বেলা ১২টার সময় এই সব এলাকাগুলো রেড জোন কার্যকর করার জন্য লাডাউন করা হবে। দুপুর ১২ টার আগেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর থাকবে।

জানা গেছে, এলাকায় সকল প্রকার গণজমায়েত মার্কেট , বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নিজ নিজ আবাস্থলে অবস্থান এবং ব্যক্তিগত গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।

পণ্য বহনকারী হালকা ও ভারী যানবাহন রাত ৮টা হতে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে। কেবল কাঁচা বাজার ও মুদি দোকান স্বাস্থবিধি মেনে সীমিত আকারে রবিবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ওষুধের দোকান এর আওতার বাইরে থাকবে।

বান্দরবানে রেড জোন চলাকালীন সময়ে সপ্তাহে মাত্র দুইদিন বাজার খোলার অনুমতি প্রদান করায় উপচে পড়া ভিড় হয়েছে সকল কাঁচাবাজার ,মাছ বাজার ও মুদির দোকানগুলোতে।

রবিবার (১৪ জুন) সকালে বান্দরবান মাছ বাজার ও মুরগির বাজার সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখলাম প্রশাসন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে জিনিসপত্র ক্রয় বিক্রয় করার জন্য বলেছে সে নিয়ম কেউ মানছে না।

মাছ কিনতে আসা রিচার্ড বমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মাছ কিনতে এসে আমার নিজের খুব ভয় লাগছে । একজন আরেকজনের গায়ের ওপর পড়ে মাছ কিনছে দূরত্ব বজায় রাখার কথা দূরে থাক বরং কার আগে কে তাড়াতাড়ি মাছ কিনবে সেই চিন্তায় ব্যস্ত। এরকম চলতে থাকলে বান্দরবানের জন্য সামনে বড় ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে।

বান্দরবানের মুরগি ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বান্দরবানকে রেড জোন ঘোষণা করে সপ্তাহে মাত্র দুইদিন দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। যার কারণে পুরো সপ্তাহ ধরে আটকে থাকা মানুষজন এই দুইদিন দোকান খোলার সাথে সাথে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য বাজারে এসে ভিড় জমায়। আমরা চাইলেও তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা, কারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সময়সীমা টা আরো দুই একটা দিন বৃদ্ধি করা যেত তাহলে মানুষের চাপ কম তো এবং মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যেকের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে তাদের বাসায় নিরাপদে ফিরে যেতে পারত।

বান্দরবান রাজার মাঠে সবজি ক্রয় করতে আসা সাবেক কমিশনার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ক্যাসমং মারমা সাথে কথা বললে তিনি জানান, সবজি বাজারে সবজি ক্রয় করতে এসে আমি আজ অনেক আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। যেভাবে মানুষ তাড়াহুড়া করে জিনিসপত্র ক্রয় করেছিল তাতে মনে হচ্ছিল আজকের পরে দুনিয়া থেকে সব বন্ধ হয়ে যাবে।

এই বিষয়ে বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার অংসুই প্রু মারমার সাথে কথা বললে তিনি জানান, যে আমরা বান্দরবান সিভিল সার্জন এর পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবুও মানুষ প্রশাসনের কথা গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো চলাফেরা করে বিপদ ডেকে আনছে। যার ফলে ক্রমান্বয়ে বান্দরবানে প্রতিদিন অনেক লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হবার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন-জীবিকা পরিচালনা করার জন্য সকল কিছু করতে হবে। বাজারগুলোকে দেখলে মনে হয় যেন একটা ঈদ শপিং কমপ্লেক্স।

এবিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম হোসেন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বান্দরবানকে রক্ষা করার জন্য আমরা অলরেডি বান্দরবান জেলা শহরসহ রুমা উপজেলায় রেড জোন ঘোষণা করেছি।

তাছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে বান্দরবানের জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য সকল রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। বান্দরবানকে সুরক্ষার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা প্রয়োজন তা গ্রহণ করে দরকার হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়াও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। কিন্তু বড় সমস্যা হল অনেকে এমনি এমনিই বাজারে ঘুরে ভীড় বাড়াচ্ছে। এমনটি দেখা গেছে অনেক জায়গায় । এজন্য তিনি সকল বান্দরবানবাসী কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, বান্দরবান, রেড জোন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন