গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৪র্থ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে র্যাবের ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ গঠনের তীব্র প্রতিবাদ
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
“দাসত্বের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়; জাতি ধ্বংসের সর্বনাশা চক্রান্তে যুবশক্তিকে মাস্তানি-গুণ্ডামিতে ভাড়া খাটানো রুখে দাও!” এই শ্লোগানকে ধারণ করে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৪র্থ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল গতকাল ৫ এপ্রিল শনিবার রাজধানী ঢাকার মুক্তি ভবনের প্রগতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম থেকে ৬০ জন প্রতিনিধি এবং পিসিপি ও এইচডব্লিউএফএর নেতা-কর্মী পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমা’র সভাপতিত্বে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক চন্দনী চাকমাসহ যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। অধিবেশনের শুরুতে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সম্মেলেন ইউপিডিএফ সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক সংগঠনকে সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামকে তাই করতে হবে। ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহকে সরকার-সেনাবাহিনী-আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও শাসকগোষ্ঠির সেবাদাস সন্তু চক্রের মোকাবেলা করে পাহাড়িদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বহু প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেই যুব ফোরামকে সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যুব সমাজ জেগে উঠলে হৃত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কাজ সহজ হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে যে কমিটি গঠিত হবে সেই কমিটি সাংগঠনিকভাবে অধিকতর শক্তিশালী ও সুদৃঢ় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
যুব ফোরামের কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত প্রতিনিধিগণ সরকারের ফ্যাসিস্ট কায়দায় সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান, গত ৪ এপ্রিল শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে পুলিশের সহায়তায় সরকারি দলের ছাত্র-যুব সংগঠনের হামলা-মারধর ও গ্রেফতার, তিন পার্বত্য জেলায় র্যাবের আলাদা ব্যাটালিয়ন গঠনের সিদ্ধান্তের সংবাদে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা জানান। প্রতিনিধিগণ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এমনিতে সামরিকায়িত, গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামই সেনা ছাউনিতে পরিণত হয়েছে। লোমহর্ষক লোগাঙ হত্যাকাণ্ডসহ প্রত্যেকটি হামলা-ধ্বংসের সাথে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। র্যাবের নতুন ব্যাটেলিয়ন গঠনের উদ্দেশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান দমন-পীড়ন আরও তীব্রতর করার দূরভিসন্ধি ছাড়া আর কিছু নয় বলে প্রতিনিধিগণ মন্তব্য করেন। র্যাবের ‘পাহাড়ি ব্যাটেলিয়ন’ নামের ব্যাপারেও যুব ফোরামের প্রতিনিধিগণ সমালোচনা করেন।
তারা বলেন ‘সরকার পাহাড়ি নাম দিয়ে পাহাড়িদের নির্যাতন চালানোর উপনিবেশিক ঘৃণ্য পন্থা গ্রহণ করেছে।’ ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে: ফেরদৌস ও তার দোসরদের গ্রেফতার না করে ডিএনএ পরীক্ষার নামে আইনী জটিলতা সৃষ্টি ও কল্পনার ভাইদের অহেতুক হয়রানির জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম বরদাস্ত করবে না বলে কাউন্সিল অধিবেশনে যুব ফোরামের প্রতিনিধিগণ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
কাউন্সিল অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটি তার কার্য্যক্রমের সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরে এবং রিপোর্টের উপর উপস্থিত প্রতিনিধিদের আলোচনার পর সর্ব সম্মতিক্রমে হাউজে তা পাস করা হয়।
দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে বিদায়ী কমিটির সভাপতি নতুন কুমার চাকমা মাইকেল চাকমাকে সভাপতি, অংগ্য মারমাকে সাধারণ সম্পাদক, জিকো ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক ও রিপন চাকমাকে দপ্তর সম্পাদক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি হাউজে উপস্থিত প্রতিনিধিবৃন্দের মতামতের জন্য উপস্থাপন করেন। হাউজে উত্থাপিত ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি উপস্থিত সকল প্রতিনিধিবৃন্দ সমর্থন জানান। এরপর তুমুল করতালি, মূর্হুমূহু স্লোগান ও উৎসবমূখর পরিবেশে নতুন কমিটি হাউজে অনুুমোদন লাভ করে।
নবগঠিত কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান বিদায়ী সভাপতি নতুন কুমার চাকমা। শেষে নবগঠিত কমিটির সভাপতি মাইকেল চাকমা সদ্য বিদায়ী সভাপতি নতুন কুমার চাকমার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মান জানান।