parbattanews

১ জানুয়ারী থেকে তিন পার্বত্য জেলায় দশ সেক্টরে গণ-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন সন্তু লারমা

যেসব জুম্মজাতি চুক্তি বিরোধী দালাল তাদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৮ 
বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটিতে জনসংহতি সমিতির বিশাল গণ সমাবেশে নির্দেশ দেন সন্তু লারমা

Rangamati sontu larma pic3

ফাতেমা জান্নাত মুমু:
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে আগামী ১লা জানুয়ারী থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ১০ সেক্টরে গণ-অসহযোগ আন্দোলনের বলে ঘোষণা দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতি সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সন্তু লারমা।

এ কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য হরতাল অব্যহত থাকবে, টানা অবরোধ চলবে, অর্থনৈতিক অবরোধ থাকবে, পর্যটন শিল্প বন্ধ করে দেওয়া হবে, সরকারি আধাসরকারি, বেসরকারি অফিসের কর্মপরিচালনা বন্ধ রাখা হবে, আদালত বর্জন করে জুম্ম জনগণের জন্য আলাদা আদালত তৈরি করা হবে, ছাত্র সমাজের মাধ্যমে আন্দোলন অব্যহত থাকবে, জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধ করা হবে, ভূমি বিরোধ চক্রান্ত কঠিন ভাবে মোকাবেলা করা হবে এবং জুম্ম দালালদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।

সন্তু লারমা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও ১৯৭২ সালের সাংবিধানিকভাবে জুম্ম জনগণকে বাঙালী বানানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আমাদের নেতা মানবেন্দ্র লারমা সে সময়ের সংবিধান মেনে নেয়নি। আজকেও শেখ মুজিব কন্যা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জুম্ম জনগোষ্ঠিকে বাঙালী মুসলমান বানিয়ে জুম্ম জাতি সত্ত্বাকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সরকার বলে বেড়ায় চুক্তি সম্পাদান হচ্ছে অথচ এ অঞ্চলে সামরিক শাসন অব্যহত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তিকে গলাটিপে হত্যা করার জন্য জুম্ম-স্বার্থ পরিপস্থী ষড়যন্ত্র করছে। তাই পার্বত্য চুক্তি উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে বাস্তবায়ন করছে না। সরকারের চুক্তি বাস্তবায়নে অসদিচ্ছা ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রের কারণে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং উগ্র-জাতীয়তfবাদী শক্তি তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়া পার্বত্যাঞ্চলে যেসব জুম্মজাতি চুক্তি বিরোধী দালাল তাদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করার নির্দেশ দেন সন্তু লারমা।

বুধবার সকাল ১০টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত বিশাল গণ-সমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে সন্তু লারমা এ ঘোষণা দেন।

চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম-স্বার্থ পরিপস্থী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষে চলমান অসহযোগ আন্দোলন জোরদার করুন- স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরার সভাপতিতে বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য ও ওর্য়াকস পার্টির সাধরাণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক্ষ ড. রাহমান নাসিম উদ্দিন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবিন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতি সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সন্তু লারমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা । পার্বত্যাঞ্চলের সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধারে লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করে জুম্ম জনগনের প্রতিরোধ আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য সরকার নিরাপত্তাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করছে। অন্যদিকে কিছু জুম্ম দালাল আছে যারা সরকারের কুচক্রয়ীয় মহলের সাথে হাত মিলিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ও জুম্ম-স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম করছে। সন্তু লারমা পার্বত্যাঞ্চলের জুম্মজাতি গোষ্ঠীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এসব জুম্ম দালালদের চিহ্নিতসহ চুক্তি বাস্তবায়নের গন-অসহযোগ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৮তম বর্ষপূর্তিতে উপলক্ষে রাঙ্গামাটির জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণ সমাবেশে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে হাজার হাজার উপজাতি নারী-পুরুষ যোগ দিতে এসে অবরোধ সৃষ্টি করে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ফলে রাঙামাটি শহরের দু’পাশের দুরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পরে সাধরাণ মানুষ। মোতায়ন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লা সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সন্তু লারমা। চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আপাত অবসান ঘটে তৎকালীন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ শান্তিবাহিনী দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলনকারী সদস্যদের একাংশ। পরিচিতি লাভ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএস নামে।

Exit mobile version