parbattanews

গভীর সমুদ্রবন্দর ও বেজার জমি অধিগ্রহণের কমিশন বাণিজ্যেও জড়িত থাকার অভিযোগ

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাগভর্তি ২৩ লাখ টাকাসহ ধরা পড়া কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এর আগে কক্সবাজার থানা পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবে।

এদিকে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রবন্দর ও বেজার অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের কমিশন বাণিজ্যে জড়িত থাকার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুক্রবার কক্সবাজার থেকে একটি বেসরকারি সংস্থার বিমানে সার্ভেয়ার আতিকুর ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে ঢাকায় বিমানবন্দরে ধরা পড়েন। সংবাদ পেয়েই আমি তাঁকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার পরামর্শ দিই। ’
তিনি আরো বলেন, একজন কর্মচারী এত বিপুল অঙ্কের টাকাসহ ধরার পড়ার ঘটনা অস্বাভাবিক। এ কারণে শুক্রবারই আতিকুরকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন জানান, শুক্রবার বিকেলেই আতিকুরকে কক্সবাজারে নিয়ে আসা হয়। এরপর ব্যাগভর্তি ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ তাঁকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক থানায় এক লিখিত আবেদনে আতিকুরের বিপুল টাকার উৎস খুঁজে বের করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। আবেদনটি জিডি হিসেবে রেকর্ড করে আতিকুরকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে সোপর্দ করা হয়। একই সঙ্গে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিতে দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত কার্যালয়কে অবহিত করা হয়।

সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি মহেশখালী দ্বীপের অধিগ্রহণ করা কয়েকটি মেগাপ্রকল্পের জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব পেয়ে লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর দায়িত্ব ছিল মহেশখালীর ধলঘাটার গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি—বেজার অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। এই দুই মেগাপ্রকল্পের প্রায় এক হাজার ৫০০ একর অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকার চেক দিতে গিয়ে আতিকুর বিপুল অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন।

বিমানবন্দরে ধরা পড়ার পর গোয়েন্দাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুর তাঁর টাকার উৎস নিয়ে দুই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন। স্থানীয়দের কাছে ‘দালাল’ হিসেবে পরিচিত তাঁরা হলেন মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের বনজামিরা গ্রামের আহমদুল্লাহ ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মনহাজীর পাড়ার বাসিন্দা রেজাউল করিম আশেক। তাঁদের থেকেই তিনি ব্যাগভর্তি টাকা ধার নিয়েছেন বলে গোয়েন্দাকর্মীদের জানিয়েছিলেন। পরে তাঁরা আতিকুরকে টাকা ধার দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই দুই ব্যক্তি সার্ভেয়ার আতিকুরের কমিশন বাণিজ্যের মূল হোতা হিসেবে কাজ করেন। এলাকার অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক নিতে আতিকুরের জন্য কমিশনের টাকা আদায় করে থাকেন। এসব বিষয় জানতে আহমদুল্লাহ ও রেজাউল করিম আশেকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সার্ভেয়ার আতিকুর ধরা পড়ার পর থেকেই উক্ত ব্যক্তিদ্বয় গা ঢাকা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে অনুরূপ অধিগ্রহণ করা জমির কমিশন বাণিজ্যের নগদ ৯৬ লাখ টাকা নিয়ে হাতে-নাতে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছিলেন কক্সবাজার এলএ শাখার সার্ভেয়ার ওয়াসিম। এ ঘটনা নিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় আরো দুই সার্ভেয়ার ফরিদ এবং ফেরদৌসকেও আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে মামলাটি।

Exit mobile version