parbattanews

গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ায় বাঁকখালী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসত-বাড়ি

ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসত-বাড়ি

রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের অংশে বাকঁখালী নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও চাষের জমি। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ দিনের টানা বর্ষণে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভাঙ্গনে আরো তীব্র হয়ে উঠায় আরো নতুন নতুন ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের  কবলে পড়ে। ফলে চরম আতঙ্কে দিন যাপন করছে এখানকার ৫ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ।

গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আলম মেম্বার জানান, বাকঁখালী নদী তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। বিগত একযুগে গর্জনিয়া ইউনিয়নের বেলতলী ফরেষ্ট অফিস এলাকা থেকে মাঝিরকাটা হয়ে পূর্ব বোমাংখীল। আর পশ্চিমে পশ্চিম বোমাংখীল এবং ক্যাউজার বিল গ্রাম পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ মাইল এলাকায় তারা অনেক কিছু হরিয়েছে।

তিনি আরো জানান, এ সময়ে অন্তত ৫ শতাধিক বসতঘর, ৩টি মসজিদ, ১টি মন্দির, ১টি কবরস্থান এবং দুনকে-দুন চাষের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এ নদীর ভাঙনে। বর্তমানে ক্যাউজর বিলের কবরস্থানটি সম্পুর্ণ বিলীণ হতে সামান্য বাকি। ফলে এখানকার নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারানো লোকজন অনন্যোপায় হয়ে বনবিভাগের জমিতে বা আশপাশে চিপা জমিতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত উচিৎ কোনো বিনিময় কেউ পায়নি কোন সরকার থেকে।

স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার ইউনুছ জানান, বাকঁখালী নদীর ভাঙনে তিনি নিজেও অনেক ক্ষতির শিকার। তবে এলাকার লোকজন যেভাবে তাদের সহায় সম্পদ হারিয়েছে তা প্রকাশের ভাষা তার কাছে নেই।

নদী ভাঙন এলাকার মোহাম্মদ আয়াজ নামের এক ভূক্তভোগী জানান, গর্জনিয়ার চারটি ওয়ার্ডের ৬নং- মাঝির কাটা, ৭ নং- (আংশিক) পুর্ব বোমাংখিল, ৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বোমাংখিল ও ৯নং ওয়ার্ড- ক্যায়াজরবিলের বেশির ভাগ এলাকা রামু উপজেলার মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে।

মাঝির কাটার ফরেষ্ট অফিস এলাকা থেকে মাষ্টার ইসহাকের বাড়ির মোড় বাঁকখালী নদী এলাকা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, এখানে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ কবর স্থান নদীর ওপারে চলে গেছে, হারিয়ে গেছে গরীব অসহায় মানুষের বাপ দাদার বসত ভিটা।

পুর্ব বোমাংখিল এলাকায় শত বছরের পুরানো মসজিদ (আইজ্জানা বরো) মসজিদ ভেঙ্গে নদীতে ভেসে গেছে, শতাধিক ঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেছে, হিন্দু পাড়ার অনেকের ঘর নদীতে তলিয়ে গেছে, অনেকে এখন পথে বসেছে, হিমেল বাবু, রামেশ শর্মা, সতিশ বাবুর ঘর নদীতে ভেঙ্গে গেছে।

পশ্চিম বোমাংখিল এলাকার শতশত মানুষের বাপ দাদার ঘর বাড়ি বিলিন হয়ে অনেকে অন্যত্র চলে গেছে, সহায় সম্বল হিসাবে যাদের একটি মাত্র জমি ছিল তারাও আজ পথের ভিখারি।

সে আরো জানান, ক্যায়াজর বিল চর এলাকার প্রায় ১০ হেক্টর ফসলি জমি নদীর ভাঙ্গনে তলিয়ে যাচ্ছে। এ গামের শত বছরের পুরানো মসজিদটি বিলীন হতে আর সামান্য বাকী আছে, ক্যায়াজর বিলের আব্দু সালামের ঘরের উঠানে চলে গেছে। এ নিয়ে স্থানীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। ভয় আর আতংক নিয়ে মানুষের জীবন কাটছে।

সরকার বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনেকে স্বপ্ন দেখিয়েছে এই সব সমাধান করার জন্য, বিএনপি সরকার থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর পর্যন্ত কেউ বাঁকখালী নদী ভাঙ্গনের প্রতিরোধের কোন উদ্যোগ নেয়নি বা কোন পরিবর্তন করেনি। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব প্রথমবার নির্বাচিত হবার পর উত্তর মাঝির কাটা থেকে মরহুম ইসলাম সাহেবের ঘর পর্যন্ত প্রায় ২০টি পয়েন্টে ৫০টি গাছ বল্লী বাঁধ দিয়েছিলো, তা কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়েছিল। এরপর আর বাঁধ নির্মাণে কেউ উদ্যোগ নেই নি আজ পর্যন্ত। আজ গর্জনিয়া নদীর পাড়ের মানুষ গুলো বড়ই হুমকিতে দিন কাটাচ্ছে।

কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম জানান, বাঁকখালী নদী কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তিতার পাড়া চর, মিয়াজি পাড়াচর, ফাক্রিকাটা চর, কচ্ছপিয়া চর ও গ্রাম, নাপিতের চর ও গ্রাম, ডাকভাংগা গ্রামসহ অনেক এলাকা বিলীন করে দিয়েছে। এমন কি শতশত একর চাষের জমিও। গত তিন দিনের টানা বর্ষনে এ ভাঙ্গন পূর্বের রূপ ধারণ করেছে বৈকি !

তিনি আরো জানান, এর আগে বিগত দিনে তিতার পাড়া,মিয়াজি পাড়া বিলীন হয়ে গেছে। এখন চাষি জমি বিলীন হচ্ছে। কিন্ত এ সবে বিগত সরকরের কোন সহায়তা কেউ পায়নি। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চলমান উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রামীন এলাকার এ বাঁকখালী নদী ভাংগনে ক্ষতিগ্রস্থদের কাছে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

Exit mobile version