parbattanews

গাজা ইস্যুতে নতুন যে প্রস্তাব দিল হামাস

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) পাঠানো ওই প্রস্তাবে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি ওই কারাবন্দিদের মধ্যে ১০০ জনই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে। ওই প্রস্তাবটির বরাতে শুক্রবার (১৫ মার্চ) এই তথ্য জানিয়েছে একটি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্সের পাওয়া ওই প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৭০০ থেকে এক হাজার ফিলিস্তিনির বিনিমিয়ে গাজায় জিম্মি ইসরায়েলি নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের মুক্তি দেবে হামাস। এই প্রস্তাবের আওতায় ইসরায়েলি ‘নারী সামরিক’ সদস্যদের মুক্তির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সর্বশের্ষ প্রস্তাবটিতে হামাস বলেছে, প্রস্তাবিত খসড়া অনুসারে ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের সঙ্গে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময় এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের তারিখ সময়সীমা নির্ধারণ করার পরই একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির তারিখ ঠিক করতে সম্মত হবে তারা।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছিল, গাজা ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে পাঠানো নতুন প্রস্তাবটিতেও ‘অবাস্তব সব দাবি’ জানাবে হামাস।

নেতানিয়াহুর কার্যালয়টি আরও জানিয়েছিল, এই ইস্যুতে করা নতুন প্রস্তাবের বিষয়টি শুক্রবার ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা ও নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।

যুদ্ধবিরতির ব্যর্থ প্রচেষ্টা

গাজায় দুর্ভিক্ষের মুখে পড়া ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় হামাস ও ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা শেষে ব্যর্থ হয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতার। এরপরও সংঘাতে লিপ্ত দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

হামাস বলেছিল, নেতানিয়াহু তাদের দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করার কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে।

ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ভূখণ্ডটি থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার, অঞ্চলটির দক্ষিণে বাস্তুচ্যুতদের কেন্দ্র ও উত্তর গাজায় ফিরে আসা এবং বিধিনিষেধ ছাড়াই সেখানে মানবিক সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল।

ফেব্রুয়ারিতে প্যারিসে গাজা ইস্যুতেএকটি খসড়া প্রস্তাব পেয়েছিল হামাস। ওই খসড়ায় ৪০ দিন সব ধরণের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার এবং প্রতি ১০ জন ফিলিস্তিনি কারাবন্দির বিনিময়ে একজন করে ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল।

ওই খসড়া প্রস্তাবটি ইসরায়েলও প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা বলেছিল, হামাসকে ধ্বংস করার যে পণ তারা নিয়েছে তা পূরণ না করা পর্যন্ত গাজায় কোনও যুদ্ধবিরতি হবে না। এদিকে হামাস বলেছিল একটি চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করা যেতে পারে।

সংঘাতের সূত্রপাত

৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস যোদ্ধাদের হামলার জের ধরে গাজার চলমান এ সংঘাতের সূত্রপাত হয়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, হামাসের ওই হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। তখন আড়াইশোর বেশি ইসরায়েলিকে জিম্মি করে নিয়ে যায় সশস্ত্র যোদ্ধারা।

এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওই দিনই আকাশ ও স্থলপথে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এসময় আহত হয়েছেন আরও সাড়ে ৭১ হাজারের বেশি মানুষ।

জাতিসংঘের সতর্কতা

চলমান এই সংঘাত ৬ মাসে পা দিয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

সেখানে আরও বেশি পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।

Exit mobile version