parbattanews

গুইমারায় অবৈধভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন : কেটে বিক্রি করছে খালের পাড়

এ সব যেন দেখার কেউ নেই

খাগড়াছড়ির গুইমারায় অবৈধভাবে যত্রতত্র চলছে বালু উত্তোলন। উপজেলায় কোন বালু মহাল না থাকলেও ব্যাঙ্গের ছাতার মত বিভিন্ন স্থান থেকে বেপরোয়া ভাবে স্ক্যাবেটর দিয়ে লক্ষ লক্ষ ফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলনের ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তঘাট, ধ্বসে যাচ্ছে ব্রীজ-কালভার্টের সংযোগ সড়ক, হুমকির মুখে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর এ সব যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, বালু খেকোরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খালের পাড় কেটে অবাধে বালু হিসেবে বিক্রি করছে। উপজেলার তৈর্কমাপাড়া, চাইন্দামুনি, চিংগুলিপাড়া, বাইল্যাছড়ি ও সিন্দুকছড়িসহ প্রায় ১৬টি স্থান থেকে বালু উত্তোলন করছে।আবার স্ক্যাবেটর দিয়ে কেউ কেউ কাটছে পাহাড়ি ছড়ার পাড়, কেউবা আবার খাল থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বিরামহীনভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।এ যেন হরি লুটপাটের রাজত্ব চলছে।

গুইমারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে হাফছড়ি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটার দৃশ্য চোখে পড়েছে। মোট ১৮টি স্ক্যাবেটর দিয়ে কেটে ৩২টি ড্রাম ট্রাক ও ২০টি ট্রলিতে পরিবহন করছে এ সব বালু ও মাটি। একদিকে শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট করে উর্বর মাটি বিক্রি করা হলেও এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট করোরই। অন্যদিকে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষকরা।যার কারণে বর্ষা মৌসুমে ধ্বসে যাচ্ছে তাদের ফসলী জমি।অনেক গুলো ছোট খাল ও ছড়ার অস্তিত্ব ইতিমধ্যে বিলিন হয়ে গেছে।

সচেতন মহলের লোকজন বলেছেন, শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তি বিশেষ ও গোষ্টির অর্থ লালসার কারণে ধ্বংস হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকায় ব্যায়ে নির্মিত ব্রিজ-কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প।আর জনস্বার্থে এখনিই এদের প্রতিরোধ করা না গেলে,ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কঠিন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

হাফছড়ি এলাকার ক্যাজরি মারমা জানান, অবৈধ বালু খেকোরা ধরাকে সরা মনে করে চলছে। এ ব্যবসায় বাঁধা বলে কোন শব্দ নেই, যা আছে তা হচ্ছে আয় আর আয়।এতে করে অনেকেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে বটগাছও বনে গেছেন।

স্থানীয় কৃষক ন্যাপা মার্মা ও অংগ্যজাই মার্মা জানান, বালু খেকোদের এমন আগ্রাসী কান্ডে এলাকার ফসলী জমি ধ্বংসের মুখে।তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।গড়ে উঠেছে প্রভাবশালীদের নিয়ে বালু ব্যবসার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যে কারণে গনমাধ্যমকর্মীরাও সংবাদ প্রকাশে নিবর দর্শকের ভুমিকা পালন করছেন। এছাড়াও বালুবাহী ট্রাকের অবাধে যাতায়াতের কারণে ধূলাবালি জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনতা।

স্থানীয় রাপ্রু মারমা জানান, তার পরিবার বালু ব্যবসায়ী মেহেদুল মাঝির নিকট এক লক্ষ আশি হাজার টাকায় তার বসত ঘর সংলগ্ন খালের পাড় বিক্রি করেছেন। তবে তার জায়গা থেকে বালু তোলার মুখিক অনুমতি দিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। কারণ ওই মেহেদুল মাঝির তার সম্পূর্ন টাকা এখনো দেয়নি। এ নিয়ে পারিবারিক ভাবে কলহ চলছে।

একাধিক বালু ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের কাছে বালু উত্তোলনের বা খালের পাড় কেটে বিক্রির বৈধ কোন কাগজ পত্র নেই। তবে অবৈধ জেনেও এ ব্যবসা কিভাবে করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, বিভিন্ন উপায়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এ ব্যবসা।

তৈর্কমা এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অংক্যচিং চৌধুরী জানান, বালু উত্তোলন ও খালের পাড় কেটে বিক্রি করায় কৃষকদের ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্তের মুখে। বিষয়টি তিনি অবগত হয়ে উপজেলার সাপ্তাহিক মিটিংয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী জানান, বালু উত্তোলন ও খালের পাড় কেটে বিক্রির বিষয়গুলো বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি শুনেছেন। তবে ব্যস্ততার কারণে সরেজমিনে গিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি তার।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফেরদাউস আনোয়ার জানান, গুইমারায় অবৈধ বালু উত্তোলন ও খালের পাড় কেটে বিক্রির বিষয়টি তারা অবগত হয়েছেন। লোকবলের সংকটের কারনে খাগড়াছড়িতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম জেলাপ্রশাসকের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তবে গুইমারায় বালু উত্তোলনের বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর বিধিসম্মত ভাবে দেখবেন ।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুষার আহমেদ জানান, বালু উত্তোলন ও খালের পাড় কেটে বিক্রির বিষয়ে দ্রুততম সময়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০এর ১৫।(১)এই আইনের ধারা ৪ এ বলা হয়েছে, অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২(দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা সর্বনিম্ন ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা হইতে ১০(দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হইবেন। তাহলে সাধারণ জনমনে প্রশ্ন থেকেই যায় বালু খেকোদের খুঁটির জোর কোথায়?

Exit mobile version