গুইমারায় কোটি টাকার পরী পালং খাট

fec-image

খাটের চার পায়ায় বড় ৪টি পরী ও চার কোনায় মাজারি ৪টি পরী এবং দুই পাশের ঝলমে চারটি করে ৮টি ছোট পরী। চার পায়ায় থাকা চার পরীর হাতে দিয়েছেন চার প্রজাপতি। পাহাড়ের পিউর সেগুন কাঠ দিয়ে কোটি টাকা দামের পরী পালং খাট বানিয়ে এমন এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে গুইমারার মো. নুরুন্নবী।

২০১৭ সালের দিকে গুইমারা বিজিবি সেক্টরের অদুরে মো. নুরুন্নবীর বাড়িতে এই খাটের কাজ শুরু করে চলতি বছরের মার্চ মাসের ১৬ তারিখ শেষ হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর দুই মাস একজন মিস্ত্রি ১৬ পরী বিশিষ্ট এই খাটের কারুকাজ শেষ করে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে পরী পালং খাটটি।

সম্প্রতি পরী পালং খাটের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভাইরাল হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জন খাটটি দেখতে ভীড় করছে মো. নুরুন্নবীর বাড়িতে। নানা শ্রেণি পেশার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন খাটটির উদ্যোক্তা মো. নুরুন্নবী ও খাটটির নির্মাতা মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক ওরফে কাঞ্চন মিস্ত্রী।

প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা এ খাটের কোন নকশা বা ক্যাটালগ নেই। নিজের মনের আবেগ আর ভালোবাসা মিশ্রিত নকশায় খাটটির নকশা তৈরি করেছেন ফার্নিচার মিস্ত্রী আবু বক্কর ছিদ্দিক (৩৫) ওরফে কাঞ্চন মিস্ত্রী। খাটটি তৈরি করতে মো. নুরুন্নবীর কাছ থেকে সাড়ে নয় লাখ টাকা মজুরী নিয়েছেন আবু বক্কর ছিদ্দিক ওরফে কাঞ্চন মিস্ত্রী।

গুইমারার মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ফার্নিচার মিস্ত্রী আবু বক্কর ছিদ্দিক (৩৫) ওরফে কাঞ্চন মিস্ত্রি ২০১৭ সালের দিকে সৌখিন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক মো. নুরুন্নবীর ইচ্ছায় খাটটি তৈরীর কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিনের ঘাম, শ্রম আর ভালোবাসায় তিন বছর দুই মাস পরিশ্রমের পর খাটি তৈরীর কাজ শেষ করেন।

১৪ বছর বয়সে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি ফার্নিচার দোকানে জোগালী হিসেবে এ পেশায় কাজ শুরু করেন কাঞ্চন মিস্ত্রী। পরে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন ফার্নিচার দোকানে কাজ করেন। সর্বশেষ কুষ্টিয়ার একটি ফার্নিচার দোকানে কাজ শেষে গুইমারা বাজারে কাজ শুরু করেন।

তিনি বলেন, পরী পালং খাট তৈরীতে প্রায় এক‘শ ফুট কাঠ লেগেছে। এখাটের নকশা তৈরি থেকে শুরু করে তিনি একাই সব কাজ করেছেন। এ খাট তৈরীতে তার কোন সহযোগী ছিলনা। তিনি বলেন, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল নিজের মনের মতো করে একটি পরী পালং খাট তৈরি করার। কিন্তু স্বাধ আর সাধ্যের মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক ছিল। একসময় তার স্বপ্ন পুরণে এগিয়ে আসেন সৌখিন মানুষ মো. নুরুন্নবী। তিনি গুইমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক ও কাঠ ব্যবসায়ী।

খাট তৈরীর বিষয়ে জানতে চাইলে মো. নুরুন্নবী জানান, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন থেকে সবাই নিজস্ব ভাবনা থেকে কিছু করছে। ভিন্ন কিছু করার ভাবনা থেকেই ব্যতিক্রমি একটি খাট তৈরীর চিন্তা করেন। তিন বছর আগে কাঞ্চন মিস্ত্রির সাথে কথাবার্তা শেষ করে কাঠ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন। তিন বছর দুইমাস পর স্বপ্নের পুর্নতা লাভ করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নেয়ার জন্যই এই খাটটি তিনি তৈরি করেছেন। এই খাটটি এক কোটি টাকায় বিক্রি করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকার এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা খাটটি ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন।

ইতিমধ্যে এই খাটটি দেখতে স্থানীয়রা ছাড়াও ঢাকা থেকে কিছু সৌখিন ব্যক্তিরা তার বাড়িতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন নুরুন্নবী। পরী পালং খাটটি বার্নিস করতে চারজন শ্রমিকের সময় লেগেছে ১ মাস ১৯ দিন। খরচ গেছে লাখ টাকারও বেশি।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থেকে খাট দেখতে আসা মো. মিজানুর রহমান বলেন, জীবনে প্রথম এমন খাট চোখে পড়লো। তাকালেই চোখ জুড়িয়ে আসে। এমন ডিজাইন করে খাট বানানোর মতো লোক আমাদের এলাকায় আছে নিজে না দেখলে বিশ্বাস হতোনা।

গুইমারা ইউপির ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল ইসলাম জানান, মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা কাঞ্চন মিস্ত্রী তিন বছর আগে চুক্তির মাধ্যমে এই কাজ শুরু করেন। তার যে এমন প্রতিভা আছে এই খাট না দেখলে জানতামনা। তার এই কাজ মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন