parbattanews

গুইমারায় ত্রিপুরা তরুণী গণধর্ষণের ঘটনায় সাংবাদিকসহ ৪ জন জড়িত: ধর্ষক মজিদের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী

hhh

স্টাফ রিপোর্টার॥

খাগড়াছড়ির গুইমারাতে অঞ্জলি ত্রিপুরা (১৭) নামের এক উপজাতীয় কিশোরীকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে পালাক্রমে ২দিন ধরে গণধর্ষণের অভিযোগে আটক ধর্ষক মোঃ মজিব মিস্ত্রি (২৮)কে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এক সাংবাদিকসহ ৩ ধর্ষকের নাম। এর আগে ধর্ষিতার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে এ ধর্ষককে আটক করে গুইমারা থানা পুলিশ।

ঘটনায় পরদিন ধর্ষিতার মা চন্দ্র রানী ত্রিপুরা বাদী হয়ে গুইমারা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৯(৩) ধারায় মোঃ মজিব মিস্ত্রি (২৮), পিতা মৃত সিরাজুল ইসলাম এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩জনসহ মোট ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৭ তারিখ: ২৯.০৭.২০১৫।

পুলিশ জানায়, মামলার পর ধর্ষক মজিব মিস্ত্রিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরও ৩ ধর্ষকের নাম উঠে আসে। তারা হলো, মোঃ দিদারুল আলম (সাংবাদিক), পিতা মোঃ আনু মিয়া, মোঃ আলী হায়দার রাব্বি (২০), পিতা শেখ মোঃ আলী, মোঃ আনোয়ার হোসেন জীবন (২৭), পিতা মোঃ সিরাজ মিয়া। তারা সকলেই একই এলাকা গুইমারা বাজার পাড়ার বাসিন্দা। পুলিশ একজনকে আটক করলেও এখনও বাকী ৩ ধর্ষক পালাতক রয়েছে।

এদিকে ঘটনার ৪দিনেও বাকী ৩ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে না পারায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় ত্রিপুরা কমিউনিটি ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ গুইমারা থানা শাখার নেতৃবৃন্দ। তাদের অভিযোগ পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারে আন্তরিক নন।

এ বিষয়ে গুইমারা থানার এস.আই হায়াত উল্লাহ জানান, বাকী আসামীদের ধরার জন্য পুলিশের জোর প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। অপরাধী যেই হোক তাদের সাজা পেতেই হবে। কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরো জানান, ধর্ষক মুজিব মিস্ত্রি ৩০ জুলাই খাগড়াছড়ি জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালতের বিচারক মো. আবুল মনসুর সিদ্দিকীর কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এতে ধর্ষক মুজিব আরো তিন জনের নাম বলেছে। তবে অভিযুক্তরা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে রয়েছে।

সাংবাদিক দিদার গত ২০ জুলাই প্রকাশ্যে জুয়া খেলার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে পরে জামিনে মুক্ত হয়। বর্তমান অভিযোগের বিষয়ে টেলিফোনে মন্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিক দিদার অজ্ঞাতস্থান থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবী করে পার্বত্যনিউজকে বলেন, তিনি ধর্ষিতা ও ধর্ষকদের কাউকে চেনেন না। আটক মুজিব মিস্ত্রির ভাইয়ের সাথে জমি নিয়ে তার বিরোধ রয়েছে। তাছাড়া একটি বাণিজ্যিক প্লট নিয়ে প্রশাসনের সাথেও তার বিরোধ চলছে। এই দুই বিরোধকে কাজে লাগিয়ে চিহ্নিত মহল এ মামলায় তার নাম জড়িয়ে দিয়েছে।

অপরদিকে ডাক্তারী পরীক্ষা ও ২২ ধারায় জবানবন্দীর জন্য পুলিশ প্রহরায় ধর্ষিতাকে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শনিবার সকাল ১১টায় তার মেডিকেল টেষ্ট সম্পন্ন হয়। রবিবার সকালে তাকে আদালতে তোলা হবে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সকালে অঞ্জলি ত্রিপুরা গুইমারার সাপ্তাহিক হাটবারে (মঙ্গলবার) বেচার জন্য তার গৃহকত্রী কল্যাণ ত্রিপুরার মালিকানাধীন কলা বাগানে কলা কাটার জন্য যায়। একই সময় স্থানীয় মজিদ মিস্ত্রি ঘাঁস কাটার জন্য সেখানে যায়। এসময় সে অঞ্জলি ত্রিপুরাকে একা পেয়ে তার মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী সেগুন বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে দুই পাহাড়ের চিপায় তাকে আটক রেখে মজিবসহ আরো তিন জন মিলে কিশোরীকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েবার গণধর্ষণ করার পর গাছের সাথে হাত-পা, মুখ বেঁধে রাখা হয় কিশোরীকে। এভাবে সোমবার রাত্রী পার করে মঙ্গলবার সকালে অত:পর বিকেলে পুনরায় ধর্ষণ করে চার যুবক। পরে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে কুমেন্দ্র ত্রিপুরার বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি কলের কাছে ধর্ষিতাকে ফেলে পালিয়ে যায় ধর্ষকরা। এসময় ঘটনা শুনে কুমেন্দ্র ত্রিপুরা রাতেই সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পরে গুইমারা সামরিক হাসপাতালে অঞ্জলি ত্রিপুরাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

Exit mobile version