গুইমারায় রবিউল হত্যাকাণ্ডে সন্দেহ সিএইচটি জুম্মল্যান্ডের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ঘিরে


পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

গুইমারায় ছাত্রদল নেতা রবিউল হত্যাকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। লাশ উদ্ধারের আগে দিন রাতে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের দোসরদের দ্বারা পরিচালিত বিতকির্ত সিএইচটি জুম্মল্যান্ড ফেসবুক পেইজের একটি উস্কানীমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট, রহস্যজনক স্ট্যাটাস নিয়ে মূলত এ সন্দেহকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গোয়েন্দা ও খুনের তদন্তকারী সংস্থাগুলো সন্দেহ সিএইচটি জুম্মল্যান্ড ফেসবুক পেইজর উল্লিখিত স্ট্যাটাসের সাথে রবিউল হত্যাকান্ডের যোগসূত্র রয়েছে।

সোমবার রাত ৯টার দিকে কথিত ‘সিএইচটি জুম্মল্যান্ড’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে, “গুইমারার জালিয়াপাড়ায় সেটেলার বাঙ্গালীদের কর্তৃক পাহাড়ি গ্রামে হামলার চষ্টো, পরে সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঁধা প্রদান করা হয়েেছ । এখনো সেনাবাহিনী আর সেটেলার বাঙ্গালি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েেছ । দূর পাল্লার বাস যাত্রীরা খোঁজ খবর নিয়ে যাতায়াাত করুন” মর্মে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট স্ট্যাটার্ দেওয়া হয়।

এমন স্ট্যাটাস দেখে স্থানীয় থানা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার এ ধরণের পরিস্থিতির কোন সত্যতা পাননি। আর তার প্রায় ১২ ঘন্টা পর মঙ্গলবার সকালে তৈকর্মা পাড়া এলাকায় ধন ক্ষেতে দু’হাত পিছমোড়া ও মুখ গামছা দিয়ে বাধা অবস্থায় রবিউল আওয়ালে লাশ মিলে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে গুইমারা উপজেলার দুর্গম তৈকর্মা এলাকায় এক পাহাড়ি নারী জঙ্গলে বাশঁ করুল সংগ্রহ করতে গিয়ে রবিউল আওয়ালের লাশ দেখে স্থানীয় ইউপি মেম্বার উগ্যজাই মারমাকে জানালে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই মারমাকে জানান।

পরে তিনি তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে দুপুর ১২ টার দিকে রবিউল আওয়ালের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি হাসপাতালে পাঠায়।

গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যোবাইরুল হক জানান, পাহাড়ের নীচে ধান ক্ষেত দু’হাত পিছমোড়া ও মুখ গামছা দিয়ে বাধা অবস্থায় পড়ে ছিল। তার মাথায় আঘাতের চিহৃও রয়েছে। লাশের প্রায় আধা কিলোমিটার দুরে একটি পাহাড়ি বাড়ীর সামনে রবিউল আওয়ালের মোটরসাইকেলটি পড়ে ছিল। তবে এ সময় বাড়ীতে কাউকে পাওয়া যায়নি।

রবিউলের পরিচয়

গুইমারা উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে রবিউল আওয়াল এক পুত্র সন্তানের জনক। ছেলের বয়স মাত্র দেড় বছর। সে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হলেও মূলত: ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সোমবারও দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে পড়েন রবিউল আওয়াল। এ তথ্য দিয়েছেন,রবিউল আওয়ালের পিতা আব্দুল মান্নান।

সিএইচটি জুম্মল্যান্ড ফেসবুক পেইজে রহস্যজনক স্ট্যাটাস


সিএইচটি জুম্মল্যান্ড ফেসবুক পেইজে রহস্যজনক স্ট্যাটাসে ছাত্রদল নেতা রবিউল আওয়াল হত্যাকান্ডের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করছে হত্যাকাণ্ড তদন্তকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সূত্র।

তারা ধারণা করছেন, সিএইচটি জুম্মল্যান্ড ফেসবুক পেইজের পরিচালকদের ধারণা ছিল, রবিউল আওয়াল হত্যাকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বাভাবিক কারণে বাঙালিরা ক্ষুদ্ধ হবে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোন পাহাড়ির উপর হামলাও হতে পারে। এ কারণে পাহাড়িদের সতর্ক করার জন্য এ ধরনের স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে- এটা পরিস্কার।

বিক্ষোভ ও আল্টিমেটাম

রবিউল আওয়ালের লাশ উদ্ধারের পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে হাজারো জনতা। দল-মত নির্বিশেষে সহস্রাধিক বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় এ সময় খাগড়াছড়ি ঢাকা ও খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কে সাময়িক যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সমাবেশ বক্তব্য রাখেন, সমঅধিকার আন্দোলনের গুইমারা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ মো: ইব্রাহিম ও সাবেক ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী। বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির বিবৃতি

গুইমারায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত রবিউল আওয়ালকে ছাত্রদল নেতা দাবী করে বিবৃতি দিয়েছে, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আবু তালেব স্বাক্ষরিত সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রবিউল আওয়ালকে গুইমারা সদর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি দাবী করা হয়।

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, এ সরকারের আমলে প্রতিনিয়ত বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা করে চলছে। বিএনপি এ নৃসংশ হত্যা ও লাশের মিছিলের সমর্থন করে ঘরে বসে থাকতে পারে না। বিএনপি এ সরকার ও তার প্রশাসনকে এ জাতীয় অমানবিক কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে অতিসত্তর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছে এবং মোঃ রবিউলের হত্যাকান্ডের নিন্দা,প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলকমুলক শাস্তির দাবী জানানো হচ্ছে।

বিবৃতিতে মোঃ রবিউলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

থমথমে পরিস্থিতি

ছাত্রদল নেতা রবিউল আওয়ালের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে পুরো গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দাঙ্গা পুলিশের পাশপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন, গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যোবাইরুল হক।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন