parbattanews

গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে শংকা ও পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ

Khagrachari Pic 02
গুইমারা থেকে ফিরে এইচ এম প্রফুল্ল/ মো: শাহজাহান:

নানা শঙ্কা ও পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে আগামী ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির নবগঠিত গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন। ফলে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ সরগরম হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে উত্তেজনাও। তা সত্বেও নির্বাচনে বিজয়ের স্বাদ পেতে সব প্রার্থীই মরিয়া।

ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীরা ছুটছেন প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে। চাচ্ছে ভোট আর দোয়া।শহর থেকে গ্রামাঞ্চল প্রার্থীদের পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। গণসংযোগ, শ্লোগান আর মাইকিং-এ মুখরিত শহরতলী থেকে গ্রামাঞ্চল। নির্বচনে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আঞ্চলিকর রাজনৈতিক ইউপিডিএফ প্রার্থী।

অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হলে বিএনপির জয়ে আশাবাদী হলেও আওয়ামীলীগ ও আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থীরা পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ নিয়ে মাঠ গরম করছেন। পক্ষান্তরে ভোটাররা চান নতুন কমিশনের অধীনে একটি অবাধ,সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চিয়তা।

নবগঠিত গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সরকারী দল আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেমং মারমা ও দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থী মো: ইউসুফের পাশাপাশি সমানতালে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-(ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রার্থী উশেপ্রু মারমা।

এছাড়া বিএনপি মনোনীত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পূর্ন কান্তি ত্রিপুরা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হলাউচিং মারমা, আওয়ামীলীগের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: নুরুন্নবী .মহিল ভাইস চেযারম্যান ঝর্ণা ত্রিপুরা,ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মিল্টন চাকমা ও থোয়াইঅংগ্য চৌধুরী ।

গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামীলীগ তাদের মর্যাদার লড়াই হিসেবে বিবেচনা করছে। এই কারণে উভয় দলের নেতারা কোমর বেধে মাঠে নেমেছে। প্রার্থীদের নিয়ে ঘুরছে ভোটারদের ঘরে ঘরে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

বসে নেই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-(ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রার্থী উশেপ্রু মারমাও। তবে সব প্রার্থীই নিজেদের বিজয়ে আশাবাদী হলেও ভোটাররা বলছে তারা সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে নিতে নতুন নির্বাচন কমিশনের একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রত্যাশা করছেন।

গুইমারার বড়পিলাক এলাকার গৃহিনী রুমি আক্তার নতুন নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে বলেন, আমার ভোটটা যাতে আমি দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারি এর জন্যে ভোট কেন্দ্রে যাবো।

দার্জিলিং টিলার বাসিন্দা উজ্জল কান্তি পাল বলেন, যাকে সুখে-দু:খে পাশে পাবো এমন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোটটি দেবো।

গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের মেমং মারমা ও মো. ইউসুফ –এর মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকলেও রাজনীতির মাঠে তারা দুজনই ক্লিন ইমেজের অধিকারী। ভোটার মহলের কাছে রয়েছে দুজনেরই পরিচিতি। দলে দুজনেরই গ্রহণযোগ্য সমানে সমান। জনসম্পৃত্ততা আর ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তৎপর দুই প্রার্থী।

বিএনপির প্রার্থী মো: ইউসুফ বলেন, গণসংযোগকালে ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিজয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তবে আওয়ামীলীগ ও ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থীর পরস্পর বিরোধী অভিযোগে নির্বাচনী মাঠ গরম হয়ে উঠছে।

ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী উশেপ্রু মারমা নিজেকে জনগণের ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবী করে বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীরা ব্যাপক সংখ্যক বহিরাগত এনে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনগণ প্রতিহত করেছে।

এবার সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগতরা আসতে পারে এমন শংকা প্রকাশ করে বলেন, তাহলে জনগণ প্রতিহত করবে। অন্য দলের প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা ও পোষ্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ প্রত্যাখান করে উশেপ্রু মারমা বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

আওয়ামীলীগ প্রার্থী মেমং মারমা বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। এবার তিনি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। তিনি কিছু এলাকায় একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে তার কর্মীদের গণসংযোগে বাধা ও পোষ্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে জনগণ প্রতিহত করবে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুইমারাকে উপজেলা ঘোষনা করেছেন, কাজে সকল উপজেলা উপেক্ষা জনগণ আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে ভোট দেবে।

গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রির্টানিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটি এম কাউছার হোসেন বলেন, আঞ্চলিক দলের প্রভাবে কিছু কিছু এলাকায় অন্য প্রার্থীর গণসংযোগ ও প্রচারণায় বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি নজড়ে আসার পর সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিদ্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে সেখানে টহল জোড়দারা করা হয়। পাশাপাশি যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য সহকারী রির্টানিং অফিসারের নেতৃত্বে একটি আইন-শৃঙ্খলা সেল গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নবগঠিত ইসির নিদ্দেশনা অনুযায়ি নির্বাচনকে অবাধ,গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত করতে প্রশাসনও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েনের জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। কোন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য প্রত্যেক এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। কেউ যদি আচারণ বিধি লংঘন করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৬জুন অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পূনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১০৯ তম সভায় নতুন উপজেলা হিসেবে গুইমারা অনুমোদন দেয়া হয়।

গুইমারা উপজেলার আয়তন ১শ ১৫ বর্গ কিলোমিটার। ভোটার সংখ্যা ভোটার সংখ্যা ২৭৩৮১ জন।
খাগড়াছড়িতে জাতীয় রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নানা ভাবে আলোচিত। গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও কাজ করে নানামুখী সমীকরণ। তাই নির্বাচনে কোন দলের রাজনৈতিক সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন,তা অপেক্ষা করতে হবে শেষ দিন পর্যন্ত।

Exit mobile version