‘গুইমারা’ উপজেলা হলেও সেবার জন্য দৌড়াতে হয় পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে, এ দায় কার?

গুইমারা প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ির গুইমারাবাসীর উপজেলার দাবি পুরণ হলেও নানান কাজে ও সেবার জন্য এখনও দৌড়াতে হচ্ছে পাশ্ববর্তী উপজেলা মাটিরাংগা, রামগড়, মহালছড়িতে। চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে কাঙ্খিত মৌলিক সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে নতুন এ উপজেলার বাসিন্দারা।

এদিকে গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর অতিবাহিত হলেও বসতে পারেননি নতুন কার্যালয়ে। জনমনে প্রশ্ন, এ দায়ভার কার? গুইমারাবাসি জানতে চায়- নির্বাচিতদের, নাকি সরকারের অবহেলায় সেবা বঞ্চিত হচ্চে তারা?

জেলার নবম উপজেলা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরুর তিন বছরেও নিজস্ব ভবনে উঠতে পারেনি গুইমারা উপজেলা পরিষদ। গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে স্বল্প পরিসরে চলছে গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের দোতলার অংশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কার্যক্রম চললেও অনেক বিভাগেরই কার্যক্রম ভাড়া বাড়ি থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

সম্প্রতি গুইমারা উপজেলা পরিষদ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কার্যক্রম চলছে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কক্ষে। পাশের আরেকটি কক্ষে চলে উপজেলা মৎস্য বিভাগের কার্যক্রম। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের অপরাপর কক্ষে উপজেলা নির্বাচন অফিস, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এ ছাড়াও অফিসের ব্যবস্থা না থাকায় একটি বাড়ি একটি খামার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ভাড়া বাড়িতেই কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তবে ইতিমধ্যে উদ্বোধনকৃত ভবন থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রাণি সম্পদ বিভাগ। উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম কোনমতে চললেও গুইমারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য এখানে কোনো অফিসের ব্যবস্থা নেই। ফলে কর্মকর্তা বিহীন কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ।

অন্যদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও উপজেলা কৃষি বিভাগের কার্যক্রম এখনও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও মহালছড়ি উপজেলা থেকেই। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও কৃষি বিভাগের কাজে গুইমারা উপজেলার জনগণকে এখনও ছুটতে হয় পাশের তিন উপজেলায়। এছাড়াও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘গুইমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’ গড়ে উঠেনি এখনও। ফলে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতে এখানকার অধিবাসীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবার জন্য গুইমারার জনগণকে পাশের কোনো উপজেলা বা ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে ছুটতে হয়।

এ বিষয়ে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ বড়ুয়া বলেন, প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে না ওঠার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনেই প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ভবনের অভাবে বেশ কয়েকটি অফিসের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও কৃষি বিভাগ এখনও পূর্বের ন্যায় পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের জন্য প্রায় ৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলছে। খুব সহসাই সকল প্রক্রিয়া শেষে ভবনের কাজ শুরু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মার্মার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুইমারাবাসীর সেবার কথা ভেবেই আমি নতুন ইউপি কার্যালয়টি উপজেলা প্রশাসনের জন্য ছেড়ে পূর্বের ভাংগা ঘরে নিজের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের সদিচ্ছা এবং সমন্বয় থাকলে গুইমারাবাসী সেবা থেকে বঞ্চিত হতো না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুইমারা বাসির সেবার লক্ষে ইউপি কার্যালয় কেন প্রয়োজনে সবকিছু ত্যাগ করতে পারি।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সম্পর্কিত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১০৯তম সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার হাফছড়ি, মহালছড়ির সিন্দুকছড়ি ও মাটিরাঙ্গার গুইমারা ইউনিয়নকে নিয়ে ‘গুইমারা উপজেলা’ ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন