গুমের সংস্কৃতি ফেরত আসায় উদ্বেগ প্রকাশ বিপিটি’র

দেশে গুমের সংস্কৃতি ফেরত আসায় নাগরিকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ পলিটিক্যাল থিংকারস (বিপিটি)।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় যাদুঘর প্রাঙ্গণে সম্প্রতি দেশজুড়ে গুমের ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপিটি’র কো-অর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ার মো. নুর নবী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুই দফা গুমের শিকার সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতিক। সভার সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন বিপিটি সদস্য ও গুমবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট রায়হান চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “দেশে গুমের পুনরাবৃত্তি অত্যন্ত দুঃখজনক। ইস্কনের প্রতি উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি গুমের অভিযোগ উঠেছে, যা উদ্বেগজনক। গুমের সংস্কৃতি আর চলতে দেওয়া যায় না।”
তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, “গুম বন্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? আগস্ট বিপ্লবের পরও গুমের ঘটনা ঘটছে এজন্য পদত্যাগ করা উচিত।”
লিখিত বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার নুর নবী বলেন, গত দেড় দশক ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ সমালোচিত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে তিনি জানান, গত ১৫ বছরে দেশে সাতশ’ অধিক মানুষ গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫০ জনেরও বেশি এখনো নিখোঁজ।
তিনি দাবি করেন, এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ভারতের সম্পৃক্ততারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। গুম তদন্ত কমিশন এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮টি পর্যালোচনা করেছে, যার বেশিরভাগেরই পরিণতি অজানা বলে তিনি জানান।
বিপিটি’র মতে, সাম্প্রতিক দুইটি গুমের ঘটনা—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কে এম মামুনুর রশিদ এবং গাজীপুর টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি এলাকার মসজিদের খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী—দেশজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সংগঠনটি বলেছে, “২৪ জুলাইয়ের বিপ্লবের পর গুমের সংস্কৃতি ফিরে আসা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেও যদি গুম চলতে থাকে, তবে সেটি রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্কজনক।”
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিপিটি জানায়, যেই জড়িত থাকুক না কেন, গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপিটি মিডিয়া সেলের সদস্য জাফর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মুহিবুর রহমান, মো. মোরশেদ আলম এবং মাওলানা কামাল উদ্দিন।

















