parbattanews

গেরিলাদের গ্রহণ করো, রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্ন করো :মিয়ানমারের দ্বিমুখী নীতি

Myanmar's Commander-in-Chief Min Aung Hlaing (L) and National League for Democracy (NLD) party leader Aung San Suu Kyi shake hands after their meeting in Naypyitaw December 2, 2015. REUTERS/Phyo Hein Kyaw/Pool - RTX1WS1F

মিয়ানমারের ১৪টি প্রদেশের মধ্যে ১১টিতেই সঙ্ঘাত চলছে। তবে একমাত্র পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন অঞ্চলে সঙ্ঘাতের সাথে জাতিগত ইস্যু যুক্ত রয়েছে।

এ অঞ্চলে বেসামরিক রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বারবার বড় ধরণের অভিযান চালিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দেয়া, সেনাবাহিনীর ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড ও জমি দখলকে গণহত্যার আদর্শ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অন্তত আটটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং ১১৮টি টাউনশিপ তাদের দখলে রয়েছে, যেখানে দেশের জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের এক ভাগের বসবাস।

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টার মতে, গেরিলা গোষ্ঠিগুলোর মধ্যে কিছু সক্রিয় রয়েছে রাজধানী নেপিদো বা পুরনো শহর ইয়াঙ্গুন থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে।

কিন্তু এই এলাকায় গেরিলাদের সাথে রোহিঙ্গাদের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন আচরণ করছে সরকার। অথচ রোহিঙ্গারা স্বাধীনতা বা আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন কিছুই চায় না।

ব্রিটেন-ভিত্তিক মিয়ানমারী স্কলার মাউং জারনি বলেন, “রোহিঙ্গারা কোন সম্প্রদায় বা সরকারের সাথে লড়াই করছে না। তারা অন্য সকলের মতো মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করতে চায়।

রাখাইনের বৌদ্ধরা বরং জাতিগত বার্মিজ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে এবং তাদের সার্বভৌমত্ব উদ্ধারের চেষ্টা করছে, যেটা তারা ২০০ বছর আগে হারিয়েছিল”।

তিনি বলেন, বিশ্বের অনেকেই এই তথ্যটা জানে না এবং মিয়ানমারকে তারা মুসলিম বনাম বৌদ্ধদের লড়াইয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে।

খ্রিস্টান গেরিলা এবং নর্দার্ন অ্যালায়েন্স

উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যে কাচিন ইনডিপেন্ডেন্স আর্মির (কেআইএ) ব্যানারে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে গেরিলারা, যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান। ২০১২ সালে কেআইএ আর সরকারী বাহিনীর লড়াইয়ে প্রায় ২৫০০ মানুষ নিহত হয়।

এর মধ্যে ২১১ জন সেনাও রয়েছে। সহিংসতায় ঘরবাড়িছাড়া হয় প্রায় এক লাখ বেসামরিক মানুষ। আংশিক বা পুরোপুরি জনশূণ্য হয় ৩৬৪টি গ্রাম। জেনেভা-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের তথ্যমতে এটা জানা যায়।

দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠি হলো শান স্টেট আর্মি – সাউথ (এসএসএ-এস)। তাদের ছয় থেকে আট হাজার যোদ্ধা রয়েছে এবং মিয়ানমার-থাইল্যাণ্ড সীমান্তে তাদের ঘাঁটি রয়েছে।

২০১৬ সালে চারটি জাতিগত গোষ্ঠি – আরাকান আর্মি (এএ), কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশান আর্মি (টিএনএলএ) একত্রিত হয়ে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স গঠন করে এবং চীন-মিয়ানমার সীমান্তের মিউজ টাউনশিপে অভিযান চালিয়ে সেটি দখল করে।

গত বছরের আগস্টে এই গ্রুপ নাওংকিও টাউনশিপের সামরিক কলেজে হামলা চালিয়ে ১৫ সেনাকে হত্যা করে।

মিয়ানমারের অন্যান্য এলাকাতেও সংঘর্ষ রয়েছে। রাখাইন ও চিন রাজ্যে আরাকান আর্মি আর আরাকান লিবারেমান আর্মির উপস্থিতি রয়েছে।

দুটো গ্রুপই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি এবং আরও স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে তারা লড়াই করছে। কিন্তু স্থানীয় রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ক্ষেত্রে তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে একজোট। তাদের দাবি, রোহিঙ্গারা এখানকার স্থানীয় নয়, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে এখানে এসেছে তারা।

অকার্যকর জাতিসংঘের সংস্থা

সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সাথে অস্ত্রবিরতিতে যাওয়ার জন্য তাদেরকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমারের ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতৃত্বাধীন সরকার এবং সেনাবাহিনী। সঙ্ঘাত কমানো, পুনর্গঠন এবং জাতীয় ইস্যুতে অভিন্ন স্বার্থ খোঁজার চেষ্টা করছে সরকার। অথচ রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

গুয়াতেমালার পররাষ্ট্র মন্ত্রী গার্ট রোজেনথাল – যিনি মিয়ানমারে জাতিসংঘের অভিযানের তদন্ত করেছিলেন, তার মতে, মিয়ামারের মুসলিম সংখ্যালঘুদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে, সেটা ২০১০ সালে গৃহীত সংবিধানের অধীনে গৃহিত রাজনৈতিক ও শান্তি প্রক্রিয়ার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন যে, মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সাথে মানবাধিকার বিরোধী তৎপরতা বন্ধে কাজ করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সিস্টেমগুলো তুলনামূলকভাবে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Exit mobile version