parbattanews

গোঁয়াখালী-টেকপাড়া-বিলহাসুরা সড়কটি ৩০ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি

কক্সবাজারের পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের গোঁয়াখালী-টেকপাড়া-বিলহাসুরা সড়কটি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে আছে। সদর ইউনিয়নের দুই ওয়ার্ড়ের মানুষের যাতায়াতের এক মাত্র মাধ্যম এ সড়কটি। এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে থাকায় এ এলাকার মানুষের চলাচলে ব্যাপক দুভোর্গ পোহাতে হয়। সরকার যায় আসে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয় কিন্তু সকলেই ভোটের জন্য আশা ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় কিন্তু উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি ৩০ বছরও এসড়কে।

এক সময় কালে সড়কটি গুরা মিয়া সড়ক নামে পরিচিত ছিল বেশ। কালের বিবর্তনে সড়কটি নাম মুছিয়ে এখন গোঁয়াখালী-টেকপাড়া-বিলহাসুরা সড়ক নামে নতুন করে পরিচিত হচ্ছে।

সাড়ে তিন কিলোমিটারের জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি গত ৩০ বছর ধরে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। চলাচলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। গত চার বছর আগে কিছু অংশ ইট দ্বারা সংস্কার করা হয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁদায় ভরপুর। যতটুকু ইট বসানো হয়েছে তার বেশিরবাগ অংশ ইট ওঠে গিয়ে কাঁদায় পরিণত হয়েছে। ইট বসানো জায়গা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করতো। এখন গাড়ির চাকা থেমে গেছে খানাখন্দক ও কাঁদার কারনে। বর্ষায় পুরো সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। কিছু অংশে কোমর সমান আবার কিছু অংশ হাঁটু সমান পানি থাকে সড়কটির উপর। মানুষের কষ্টের সীমা থাকেনা বর্ষায়।

স্থানীয়রা জানায়,সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন তিন গ্রামের শতশত মানুষ চলাচল করে। পেকুয়া বাজার, উপজেলা পরিষদ, থানা, সরকারী হাসপাতাল,মডেল সরকারী জিএমসি স্কুলসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারতে সড়কটি এখানকার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত থাকায় গ্রামীন এ সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় আশরাফ মিয়া, মনির আহমদ, নুরুচ্ছফা, জাফর আলম, জালাল উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের দুর্দশা কপাল থেকে যাবেনা। বাপ দাদার জীবন পার করেছে কাদায় হেঁটে হেঁটে। আমাদেরও একই অবস্থা। ভোট আসলে চেয়ারম্যান মেম্বারদের সড়কটি ইট বসনোর কথা বলে মুখে ফেনা তুলে। ভোট চলে গেলে আর খবর রাখেনা। একটি বারের জন্য তাদের দেখা মেলেনা। কত চেয়ারম্যান,মেম্বার এমপি, মন্ত্রী গেছে আর আসছে কেউ সড়কটির খবর রাখেনি। বর্ষায় সড়কটির বেশিরভাগ অংশ পানির নিচে থাকে।

গৃহবধু রেনু আরা বেগম, রোকেয়া বেগম, শাহারু বেগম বলেন,আমাদের বিয়ের বয়স ত্রিশ বছরের বেশি। সড়কটির উন্নয়ন এখনো পর্যন্ত চোখে দেখিনি। কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দোলনা কিংবা মানুষের কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। আমরাও অনেকবার এভাবে গেছি। ছেলে মেয়েদের অনেক কষ্ট করে স্কুল কলেজে আসা যাওয়া করতে হয়। সড়কটি দ্রুত সংস্কার চাই।

ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, জাহেদুল ইসলাম, শওকত হোসেন বলেন, পেকুয়া বাজারে আমাদের মুদির দোকান রয়েছে। প্রতিদিন সওদা করতে যাই। গ্রীষ্মকালে কোন মতে যাওয়া আসা করতে পারলেও বর্ষায় দুর্ভোগে পড়ি। কাদায় কাপড় চোপড় নষ্ট হয়ে যায়। একটু বৃষ্টি হলেই পানির নিচে তলিয়ে থাকে সড়কটি। উন্নয়নের কথা হলেও চোখে পড়েনি। চেয়ারম্যান -মেম্বারদের দৃষ্টি নেই সড়কটির প্রতি।

স্কুলছাত্রী রুপসি, মাদ্রাসাছাত্রী জিসান বলেন, কত বার বই খাতা নষ্ট হয়ে গেছে। বর্ষায় বৃষ্টির পানি আর কাদায় ঠিকমত পাঠশালায় যেতে পারিনা। পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। রাস্তা ডুবে থাকলে নৌকা যোগে স্কুল কলেজে যেতে হয়। পিচ্চিল সড়কে ওছুড পা পিচ্ছিলিয়ে অনেকে আহত হয়েছে।

ইউপি সদস্য মো.সাজ্জাদ বলেন, সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই ওয়ার্ড়ের ২/৩ হাজার মানুষের একমাত্র চলাচল মাধ্যম এ সড়কটি। তবে সড়কের কিছু অংশ অন্য ওয়ার্ডে পড়েছে। কিছু অংশ ইট বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সংস্কার হবে। ইউপির চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ’র মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসলে সড়কটি উন্নয়ন বঞ্চিত। এতবড় বাজেট উপজেলা পরিষদে হয়না। এলজিইডির মাধ্যমে সড়কটি উন্নয়ন করতে হবে।

স্থানীয়রা জানান, সড়কটির বিষয়ে স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে একাধিকবার বলেছি। এমপি সাহেবও অনেকবার উন্নয়নের আশ্বস্থ করেছেন। তিনি নিজে গিয়ে সড়কটি দেখবেন বলেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর পেকুয়ার উপ সহকারী প্রকৌশলী মো.আলীম বলেন, সরেজমিন গিয়ে সড়কটি দেখব। তারপর কি করা যায় চিন্তা করব।

Exit mobile version