গৌতম বুদ্ধের অহিংসা নীতি অনুসরণ করে পরস্পরের প্রতি মৈত্রীভাব পোষণ করাই মানব ধর্ম
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
ব্যাপক আয়োজন আর উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে মাটিরাঙ্গার বরঝালা মেত্রী বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দানোত্তম ‘কঠিন চীবর দানোৎসব’ পালিত হয়েছে। শুক্রবার দিনব্যাপী ‘কঠিন চীবর দানোৎসব’ অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দ্বেশনা আর ধর্মসভা‘র মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিনটি। এর আগে বৃহস্পতিবার বেইন ঘর ও সুতা কাটা উদ্বোধনীর মধ্য দিয়ে মহামতি বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে শুরু হয় দু’দিনব্যাপী দানোত্তম ‘কঠিন চীবর দানোৎসব’র উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটির সারোয়াতলী রত্নদ্বয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শীলাজ্যোতি ভান্তে।
উৎসবকে ঘিরে মুখর হয়ে উঠে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন বরঝালা মেত্রী বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণ। উৎসবকে ঘিরে বিহার প্রাঙ্গণে ঢল নামে অগণিত পুণ্যার্থীর। আশে-পাশের গ্রাম থেকে আসা পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মিলন মেলায় পরিণত হয় উৎসবস্থল।
‘কঠিন চীবর দানোৎসব’ উপলক্ষ্যে বিহার প্রঙ্গণে আয়োজিত ধর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন বরঝালা মেত্রী বৌদ্ধ বিহারের ভান্তে ভদন্ত সুরিয় মিত্র। দিনব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসবে ধর্মদ্বেশনা প্রদান করেন বড় সিলতুক আর্য্যধাম বৌদ্ধ মহাশ্মমানের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ভদন্ত নন্দ প্রিয় মহাথের। এছাড়াও মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় অশোকারামা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ রাসেন্ডা মহাথের, জনকল্যান বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত বিমল তিষ্য মহাথের প্রমুখ। ধর্মসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাদারণ সম্পাদক সুবাস চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বরঝালা মেত্রী বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মঙ্গল মোহন চাকমা।
শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ধর্মসভায় বক্তারা বলেন, গৌতম বুদ্ধের অহিংসা পরম নীতি অনুসরণ করে একে অপরের প্রতি মৈত্রীভাব পোষণ করাই মানব ধর্ম। এতে জন্ম-জন্মান্তরে সুখ ও শান্তি লাভ হয়। তারা বলেন, সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা সব সময় সৎপথে চলে। প্রাণী হত্যা, ব্যাভিচার, মাদক সেবন, মিথ্যাচার, কামলোভ, দ্বেষ ও হিংসা পরিহার করে চলতে পারলে ইহকাল পরকাল পরম শান্তি লাভ করা যায় উল্লেখ করে বক্তারা পার্বত্যাঞ্চলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সর্ববৃহত ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দানোৎসবের মধ্যে দিয়ে সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি ও ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
প্রসঙ্গত, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলে।