গ্রাহকের টাকা নিয়ে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনসুরেন্সের প্রতারণা

fec-image

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা চান্দের পাড়ার বাসিন্দা রেহেনা আক্তার (৪০)। পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের একজন মাঠকর্মীর প্রলোভনে পড়ে ডিপিএস করেন। যার পলিসি নং-১৫১১০০৪৫০৬-৭। দশ বছরে মোট জমা করেন ২৪০০০ টাকা। মেয়াদ শেষে বীমা অংকের বিপরীতে ৪৮ হাজার টাকা প্রদানের কথা। ইতোমধ্যে সেই পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে।

অফিসিয়াল নিয়মানুযায়ী ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি টাকার জন্য আবেদন করেন রেহেনা আক্তার। যার ডেস্ক পাস নাম্বার ২৪৬। আবেদনের তিনমাস পার হলো। টাকা প্রদানের কোনো লক্ষণ নেই। সঠিক সুরাহা দিচ্ছে না অফিসের কেউ। গেল তিন বছরে কক্সবাজার জোনাল হেড অফিসে কতশত বার গিয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই। ফোন করলে কেবল আশ্বাসের বাণী শোনেন রেহেনা আক্তার নিজের কষ্টের জমানো টাকা কখন ফেরত পাবেন তার কোনো দিন তারিখও দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।

রবিবার (৩ এপ্রিল) বিকালে পদ্মা লাইফের কক্সবাজার জোনাল হেড অফিসে গেলে দেখা হয় ভুক্তভোগী রেহেনা আক্তারের সঙ্গে। যদিও ওই সময় অফিস ইনচার্জ বা কোনো উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দেখা মেলেনি। অফিস ফাইল ও আসবাবপত্রে ময়লা জমে আছে। অনেকটা পরিত্যক্ত অফিসের মতো। ঘরটিতে আছেন দুইজন ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে কথা বলছেন রেহেনা আক্তার। টাকা কখন ফেরত পাবে, জানতে চাইছেন। সঙ্গে তার স্বামীও। কোন সদুত্তর পাননি। দুঃখভরা মনে ফেরত গিয়েছেন অসহায় রেহেনা। এরকম হাজারো রেহানা বীমা কোম্পানির প্রতারণা, হয়রানির শিকার। মেয়াদ শেষে টাকার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা। ঘুরছে পথেপথে।

পদ্মা লাইফের অফিসে আরেক ভুক্তভোগী সঙ্গে অফিসে দেখা হয়। তার নাম মো. বেদার মিয়া। সদরের চৌফলদন্ডির বাসিন্দা। তিনি দশ বছর মেয়াদে পলিসি করেন। যার নং-১৪১১০১০১৩০১।

দুই বছর মতো কিস্তি দেন। আর চালাতে পারছেন না। গত বছরের ২৪ আগস্টে টাকার জন্য আবেদন দেন। যার ডেস্ক পাস নাম্বার ২১৫। গেল সাত মাসে অসংখ্যবার অফিসে গেছেন। ফোনে কথা বলেছেন। শুধু আশার বাণীতেই হাবুডুবু খাচ্ছে নিরীহ এই গ্রাহকের জমানো টাকাগুলো।

মো. বেদার মিয়া বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে, অধিক লোভে ফেলে আমাকে পলিসি করিয়েছে। এখন আমি কিস্তি দিতে অক্ষম। টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন দিছি। অসংখ্যবার অফিসে এসে ফেরত গেছি। অফিসে আসলে ‘জলিল স্যার’ নামক একজনের নাম্বার দেয়। তাকে ফোন দিলে কোন উত্তর দেয় না। রিসিভ করে পরিচয় পেলে ফোন কেটে দেয়। জসিম উদ্দিন নামক একজন ব্যক্তি অফিসে থাকেন। তার কাছেও কোন উত্তর নাই। বারবার শুধু সময় দিতে থাকেন। তবে, জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বললে জানান অসহায়ত্বের কথা।

তিনি বলেন, আমি চাকুরী ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আশ্বাস দিয়ে আবার এনেছে। অফিসে কোন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাও নাই। যত ঝামেলা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

জসিম উদ্দিন বলেন, কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। এস আলম গ্রুপ দায়িত্ব নিয়েছে। এরই মাঝে করোনা। তবু আমরা কোনমতে অফিস চালাচ্ছি। গ্রাহকদের আবেদনগুলো হেড অফিসে পাঠিয়ে দিই। সেখান থেকে প্রক্রিয়া করে থাকে। আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান হবে।

কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ হিসেবে জামাল উদ্দিন নামক একজনের নাম্বার দেন জসিম উদ্দিন। তাকে ফোন দিলে অস্বীকার করেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, কক্সবাজার অফিসের সাথে আমার কোন খাতির নাই। আমি উখিয়ার দায়িত্বে। কমিশনে কাজ করি। ঢাকা হেড অফিসের সঙ্গে সরাসরি আমার লেনদেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন