ঘুমধুমে কুমির চাষে বিস্ময়কর সাফল্য : বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনা
পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে কুমির চাষে বিস্ময়কর সাফল্য এসেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৪শতাধিক কুমির বিদেশ রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বেসরকারিভাবে গড়ে উঠা কুমির চাষ প্রকল্পটি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হলে আরো বেশি কুমির বিদেশের মাটিতে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম মৌজার ২৫ একর পাহাড়ি জমিতে আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০৮ সালে গড়ে তোলে ‘আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড’ নামের কুমিরের খামারটি। তবে বাণিজ্যিকভাবে তারা কুমিরের চাষ শুরু করে ২০১০ সালে। প্রথম দফায় অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে ৫০টি অস্ট্রেলীয় প্রজাতির কুমির আমদানি করে খামারের উন্মুক্ত জলাশয়ে ছাড়া হয়। প্রতিটি কুমির কিনে আনা হয়েছিল তিন লাখ ৫০ হাজার টাকায়।
এর মধ্যে ৪টি কুমির মারা গেলেও সুস্থ রয়েছে ৪৬টি। তার মধ্যে ৩১টি মাদি কুমির, আর ১৫টি পুরুষ। একেকটি কুমির প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় ৮/১০ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক একেকটি মাদি কুমির ৪০-৮০টি করে ডিম দেয়। এরা ডিম দেয় সাধারণত বর্ষাকালে। ডিম ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে ৮০-৯০ দিনে ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফোটানো হয়। বর্তমানে খামারে বাচ্চাসহ ছোট-বড় কুমিরের সংখ্যা ৩৪০০টির মত। খামারে উন্মুক্ত জলাশয় ও খাঁচার ভেতরে- দুইভাবেই কুমির রাখা হয়েছে।
আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড এর কুমির প্রকল্পের এডভাইজার ঝুলন কান্তি দে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ৪ শতাধিক কুমির মালয়েশিয়ায় রপ্তানির টার্গেট রয়েছে। এসব কুমির রপ্তানি করলে ৪শ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘কুমির চাষের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন পশু-পাখি, প্রজাপতি চাষ, বার্ড পার্কসহ কয়েকটি কটেজ ও মিউজিয়াম হাউস নির্মাণ করে প্রকল্পটিকে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত প্রতিটি কুমির ৫ ফুট লম্বা, ওজন ২০/২৫ কেজি। চামড়া ছাড়াও কুমিরের প্রতি কেজি মাংস ৩০ ডলারের বিক্রি হয় বিদেশে। উক্ত কুমির গুলো লবাণাক্ত এবং মিটা পানিতে বসবাসযোগ্য জানান তিনি।
স্থানীয় নুর মোহাম্মদ জানান, ঘুমধুমে কুমির খামারটি গড়ে উঠায় স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে খামারে ২০জন কর্মচারী ও দুজন প্রকল্প কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রতিদিনই খামারটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছেন।
কুতুপালং থেকে কুমির দেখতে আসা দর্শনার্থী মুন্নি আকতার বলেন, আগে কখনো কুমির দেখিনি, আজকে
স্বচক্ষে কুমির অনেক ভালো লেগেছে।
একই কথা এনজিওকর্মী শাহেদ আলমের। সেও বলেন, আমার বাড়ী কুমিল্লায়। দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে চাকরি করে আসলেও এখানে আসার সুযোগ হয়নি। আজকে চাকরি শেষ করে বিকেল বেলায় কুমির দেখতে এসেছি। খুবই ভালো লেগেছে এতগুলো কুমির একসঙ্গে দেখে।
কুমির খামারটি উখিয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দুরত্বে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বালুখালী টেলিভিশন উপ-কেন্দ্র থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার ভিতরে ঘুমধুম পাহাড়ি এলাকায় দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ কুমির চাষ প্রকল্পটি গড়ে তুলেন দেশের বৃহত্তর বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আকিজ ওয়ার্ল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড।
কুমির খামার প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আদনান আজাদ জানান, মিডিয়াকে তথ্য দেওয়ার আমার পক্ষে নিষেধ। তবুও যদি বলতে হয়, তাহলে আন-অফিসিয়াল বলতে হবে। তিনি বলেন, আগামীতে কিছু সংখ্যক কুমির বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব কুমির বিদেশে রপ্তানি করা হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। কিন্তু কতটি কুমির তা বলা যাবেনা। এছাড়া আর কোন তথ্য লাগলে আমাদের উধ্বর্তন কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এদের দেখতে পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। এমন প্রানীদের সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।