অপারেশনে ফিরবে নতুন জীবন

চকরিয়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া এতিম শিশুর পাশে ছাত্রলীগ

fec-image

আসমাউল হুসনা বয়স মাত্র আট বছর। গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৩নং ওর্য়াডের মহাজেরপাড়া। এই শিশু মেয়েটি এতিম, মা ছেনুয়ারা বেগম টিউমার রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ বছর আগে মারা গেছেন। মৃত্যুর পরে মেয়েটির বাবা নেজাম উদ্দিন আরেকটি বিয়ে করে এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছে। গর্ভধারীনি মা বেঁচে নেই, বাবা থাকলেও অপর নারীকে বিয়ে করে লাপাত্তা। এই অবস্থায় অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি হয়ে পড়ে শিশু আসমা এবং তাঁর অপর বোন। পরে দুই বোন আশ্রয় নেন খালার বাড়িতে। সেখানে বছর আগে আগুনে পুড়ে শরীরের একটি অংশ (পেটে) ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় শিশু মেয়ে আসমাউল হুসনার।

ওইসময় খালা শিশু মেয়েটিকে অনেক কষ্ঠের বিনিময়ে চিকিৎসা করলেও এখনো শরীরের সেই ক্ষতস্থানটি শুকাইনি। বরং দিনদিন শরীরের ওই অংশের আঘাতটি তাকে পীড়া দিচ্ছে।

খালার বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে ঘটনা জেনে প্রতিবেশি কিছু উদ্যামী যুবক শিশুটির শরীরের ক্ষতস্থানটি অপারেশন করতে যোগাযোগ করেন চকরিয়া ইউনিক হাসপাতালে। ওইসময় হাসপাতালের চিকিৎসক মো.কামরুজ্জামান উদ্যোমী যুবকদের জানান, শিশুটির অপারেশন করতে ৪০ হাজার টাকার মতো প্রয়োজন হবে। এরপর শিশুটির চিকিৎসা নিশ্চিতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বরইতলী রাস্তার মাথা এলাকায় দাঁড়িয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে টাকা তুলছিলেন প্রতিবেশি লোকজন।

বিষয়টি দেখে এগিয়ে যান চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউছুপের ছেলে সমাজকর্মী মোহাম্মদ মিরান। কয়েকদিন আগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোহাম্মদ মিরান তাঁর ফেসবুক পেজে শিশুটির চিকিৎসায় সবার সহযোগিতা চেয়ে একটি পোষ্ট দেন। তারপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার নজরে আসে। এরই আলোকে এতিম এই শিশু মেয়েকে নতুন জীবন দিন, হৃদয়বান মানবিক মানুষগুলো এগিয়ে আসুন শিরোনামে কয়েকদিন যাবত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার একাধিক গণমাধ্যমকর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের মানুষের ফেসবুক ফেইজে পোস্ট দেয়া শুরু করেন। তাতে অনেকে সাড়া দেন শিশুটির চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় অর্থ সহযোগিতা দেয়ার।

সর্বশেষ গতকাল শিশু আসমাউল হুসনার অপারেশন নিশ্চিতে আরব আমিরাত প্রবাসি সাজ্জাদ সাঈদ দেন ১০ হাজার টাকা। এছাড়াও চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকিত হোসেন সাজিবের মাধ্যমে ওই প্রবাসি শিশু আসমার চিকিৎসায় উল্লেখিত টাকা পাঠিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকালে চকরিয়ার হারবাংস্থ ইনানী রির্সোট মিলনায়তনে উপস্থিত হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ সম্পাদক আকিত হোসেন সাজিব। এতিম শিশু আসমা ও স্বজনের হাতে প্রবাসির দেওয়া দশ হাজার টাকাও তুলে দিয়েছেন তিনি।

চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকিত হোসেন সাজিব বলেন, ফেসবুকে একটি চিকিৎসা সহায়তার স্ট্যাটাস দেখে এতিম শিশু আসমাউল হুসনার বর্তমান স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। আমার অনুরোধে আরব আমিরাত প্রবাসি বড়ভাই সাজ্জাদ সাঈদ তাঁর চিকিৎসার জন্য দেওয়া দশ হাজার টাকা শিশু আসমা ও স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করলাম। আগামী বৃহস্পতিবার চকরিয়া ইউনিক হাসপাতালে অপারেশন হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, এতিম শিশু আসমার চিকিৎসা খরচ বাবদ সার্বক্ষণিক সহায়তার কথা দিয়েছেন চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুল ইসলাম সোহেল। আমিও তাঁর সম্পূর্ণ ট্রিটমেন্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকার জন্য ব্যক্ত প্রকাশ করছি।

প্রবাসি সাজ্জাদ সাঈদ, চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেল, চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকিত হোসেন সজিব এর মতো আরও অনেকে এতিম শিশু আসমাউল হুসনার সুচিকিৎসা নিশ্চিতে পাশে থাকার অভিমত প্রকাশ করেছেন।

চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.হামিদুল্লাহ মিয়া সরকারি বরাদ্দ থেকে শিশুটির ভালো চিকিৎসা নিশ্চিতে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

চকরিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দানবীর খাঁজা সাহাবউদ্দিনও কথা দিয়েছেন শিশুটির চিকিৎসায় তিনি পাঁচ হাজার টাকা দেবেন। লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছারও কথা দিয়েছেন শিশু আসমার পাশে থাকার।

বর্তমানে এতিম এই শিশু মেয়েটি চকরিয়া উপজেলার বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা এলাকার মুক্তার আহাম্মদের বাড়িতে থাকেন। তার সুচিকিৎসা এবং ভবিষ্যত জীবন নিশ্চিতে হৃদয়বান সবাই সহযোগিতা করতে চাইলে শামীম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক (সিএনজি শ্রমিক ঐক্য সমিতি বরইতলী নতুন রাস্তার মাথ), মোবাইল (০১৮৪০-১৪৫৪৬৬) মহাজের পাড়া বরইতলী এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোহাম্মদ মিরান (০১৮৭৫-৭৯০১২৯) মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন