লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ৪৮ হাজার ১৬৫ একর

চকরিয়ায় আমনের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

fec-image

চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ৪৮ হাজার ১৬৫ একর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে খরা বৃষ্টির কারণে আমন চাষাবাদ করতে কিছুটা বিলম্ব হলেও ঠিক সময়ে চাষিরা উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। অনুকূল পরিবেশ, সময়মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় মাঠে মাঠে আমন ফলেছে আশানুরূপ। ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। বর্তমানে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে সোনালি ধান ইতোমধ্যে কাটতে শুরু করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। আমনের ফলন ভালো হওয়ায় চলতি বছরও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমনটাই নিশ্চিত করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সর্বত্র এখন আমন ফসলের মাঠে পাকা ধানের সোনালি হাসি। অগ্রহায়ণের উজ্জ্বল রোদে সেই হাসি আরও ঝলমল করছে। নতুন ধানের গন্ধে জনপদের গ্রামে-গ্রামে নবান্নের সাজ সাজ রব। মাঠে মাঠে কৃষকরা কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন। কুয়াশা ভেজা শীতের সকাল থেকে শুরু করে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত ফসল কর্তনের চিরাচরিত দৃশ্য এখন সর্বত্র। ধান মাড়াই, বাছাই আর শুকানোর কাজে ব্যস্ত এখানকার কৃষক পরিবার। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে এ বছর খরা বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল না থাকলেও ধানের ফলন কিন্তু ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হলেও কৃষকের মন ভরছে না। কারণ বর্তমান সময়ে কৃষিতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে এতে তাদের উৎপাদন খরচই মিলছে না এমন অভিযোগও করেছেন বেশ কয়েকজন কৃষক।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন শাখা) রাজীব দে বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার একটি এলাকায় ১৯ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চাষাবাদ শুরু করা হয়। তৎমধ্যে এ বছর ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে উপশী জাত, ২ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়। জমিতে যেসব চাষাবাদ করা হয়েছিল তৎমধ্যে উপশী জাতের ব্রি-ধান ৩৩, ৪৯, ৭৫ ও ৮৭। এছাড়াও হাইব্রিড জাতের মধ্যে চাষাবাদ করা হয় ধানি গোল্ড। মূলত জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার ও আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণে চাষাবাদে ফলন বৃদ্ধি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে চাষের শুরুতেই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক কৃষকেরা গুটি ইউরিয়া ও এলসিসি পদ্ধতি অনুসরণ করে আমন চাষাবাদ শুরু করে। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষকেরা ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারে বলে জানান তিনি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৯ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় আমন ধান আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এই মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম হওয়ায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে কৃষকরা ঠিকই আমন চাষাবাদে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ভয়ঙ্কর কোন ধরণের প্রভাব না পড়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠে। এ পর্যন্ত চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান কাটা শেষ হয়েছে। আশাকরি ২-১ সাপ্তাহের মধ্যেই অবশিষ্ট জমির আমন ধান কাটা শেষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন