“পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করার মাধ্যমে আশানুরূপ ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যে চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের ব্যতিক্রমী এই উদ্ভাবন পদ্ধতি প্রতিবছরই চকরিয়া উপজেলার হাজারো কৃষকের মাঝে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলছে।”

চকরিয়ায় আমন ক্ষেতে পোকা দমনে আলোর ফাঁদ

fec-image

চকরিয়া উপজেলার আঠার ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার ৪৮ হাজার ৬শত একর জমিতে চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, এ বছর চাষ করা হচ্ছে ৪৫ হাজার একর জমিতে উপষী জাতের, তিন হাজার একর জমিতে হাইব্রিড জাতের ও ছয়শত একর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ইতোমধ্যে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে রোপন শেষ হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার ও পৌরসভার ৫৫টি ব্লকের অধীনে আমন ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমন ঠেকাতে স্থাপন করা হচ্ছে আলোক ফাঁদ।

পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করার মাধ্যমে আশানুরূপ ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যে চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের ব্যতিক্রমী এই উদ্ভাবন পদ্ধতি প্রতিবছরই চকরিয়া উপজেলার হাজারো কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা বেড়ে চলছে। কৃষি কর্মকর্তাদের তদারিকতে কৃষকরা ধান রোপন শেষ হওয়ার পর থেকে জমিতে আলোক ফাঁদ স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এ বছর ৪৮ হাজার ৬০০একর আমন ধান ক্ষেতে বসানো হচ্ছে স্থায়ী ১৫টি ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ২৬০টি আলোক ফাঁদ।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মো.মহিউদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার আঠারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় আমন ধানক্ষেতে প্রতিবছরের মতো কৃষি বিভাগের তরফ থেকে ‘আলোক ফাঁদ’ স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ এলাকায় আলোর ফাঁদ বসিয়ে ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জমিতে এই পদ্ধতিতে আলোক ফাঁদ বসিয়ে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয় কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে কৃষি বিভাগের ব্যতিক্রমী এই উদ্ভাবনীর দিনদিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনীর সুফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে রাতের বেলায় একটি স্থানে বালতির উপর অংশে বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো ছড়ানো হচ্ছে। আলো পেয়ে ক্ষেতের ভেতরে থাকা ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড় উড়ে এসে জড়ো হয়ে বালতির পানিতে পড়ছে। পরে এসব পোকা-মাকড় পানিতে আটকে গেলে আর উঠতে পারেনা। এরপর ক্ষেতের মালিক বা কামলারা এসে এসব পোকা-মাকড় মেরে ফেলছে। এভাবে আমন ধান ক্ষেত পোকা-মাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪৮হাজার ৬০০ একর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত এসব জমি ৫৫টি ব্লকে ভাগ করে তাতে ২৭৫টি আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হচ্ছে। তৎমধ্যে ১৫টি স্থায়ী ও ২৬০টি অস্থায়ী। ফলন ঘরে তোলার পর অস্থায়ী আলোর ফাঁদগুলো উঠিয়ে নেয়া হবে।

তিনি বলেন, আলোর ফাঁদ স্থাপনের মাধ্যমে ক্ষেতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি সনাক্ত করণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সেমিনার করে চাষের আগে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবার বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য আলোক ফাঁদ পদ্ধতি বেশ উপযোগী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, ফসলের জন্য ক্ষতিকর প্রাণী পোকামাকড় নির্ণয় এবং তা প্রতিরোধে ‘আলোক ফাঁদ’ পদ্ধতি একটি সফল ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনা। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা কোন ধরণের খরচ ছাড়াই সহজে ফসলের ক্ষতি ঠেকাতে পারে। আমি প্রতিবছর কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আলোক ফাঁদ পদ্ধতির সুফল সম্পর্কে কৃষকদেরকে ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি বলেই প্রতিবছর জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই প্রদ্ধতির।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন