চকরিয়ায় করোনা জয়ী আকাশ চৌধুরী প্লাজমা দিলেন আইসিইউতে থাকা এক বৃদ্ধাকে

fec-image

আইসিইউতে থাকা করোনায় আক্রান্ত এক নারী রোগীকে প্লাজমা দিলেন করোনা জয়ী এসএম আকাশ চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে থাকা রওশন আরা ফয়েজ (৬২) নামের এক নারীকে প্লাজমা দিলেন আকাশ।

তিনি গত ৭ মে (রবিবার) মোবাইল ফোন কল পাওয়ার পরপরই ছুটে যান সেখানে। প্লাজমা দেওয়ার পর রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। কক্সবাজার জেলার প্রথম কোন করোনা জয়ী অন্য রোগীকে প্লাজমা দিলেন। ইতোমধ্যে আকাশের পরিবারে আরও তিনজন করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন।

আকাশ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের এসএম চরের বাসিন্দা বশির আহমদ সওদাগরে পুত্র। তার বাবা বশির আহমদ, মা মর্শিদা বেগম (৬০) এবং তার ছোট বোন সাদিয়া জন্নাত (২০) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ হয়েছেন।

করোনা জয়ী আকাশ চৌধুরী বলেন, আমি করোনায় সুস্থ হওয়ার পর প্লাজমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখি। প্লাজমা দিয়ে কারো জীবন বাঁচাতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। সুস্থ হয়ে নিজের ফেইসবুকে এ পজিটিভ প্লাজমা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন আসে করোনায় আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিঙ্গারপুর প্রবাসী এক চিকিৎসকের মা রওশন আরা ফয়েজ (৬২) করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার এ পজিটিভ প্লাজমা দরকার। ওই নারীর প্রবাসী চিকিৎসক ছেলে এবং তার মেয়ের জামাই চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. আরিফ আমাকে ফোন করেন। এরপর গত ৭ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে ৪০০ এমএল প্লাজমা দিয়েছি।

তিনি বলেন, একজন করোনা রোগীর ২০০এমএল প্লাজমা প্রয়োজন। অন্য রোগীকে সুস্থ করতে আরও ২০০ এমএল প্লাজমা ব্লাড ব্যাংকে রেখে আসি। আমার প্লাজমা দিয়ে যদি একজন আক্রান্ত রোগী সুস্থ হন তাহলে সেটি স্বার্থকতা। সেজন্য আমি করোনায় আক্রান্ত এক বৃদ্ধা নারীকে প্লাজমা দিয়েছি। জীবন বাঁচানোর মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা। আমি শুধু নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও বলেন, করোনা জয়ী হওয়া রোগীরা প্লাজমা দিলে শরীরের কোন সমস্যা হয় না। এই দূর্যোগ মুহুর্তে আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

উল্লেখ্য : ৩ মে এসএম আকাশ চৌধুরীর শরীরে সামান্য জ্বর এবং সর্দি-কাশি শুরু হয়। এরপর থেকে বাড়িতে আলাদা কক্ষে একা থাকেন। পরে ৯ মে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে করোনা ভাইরাসের নমুনা দেওয়ার দুইদিন পর ১১ মে আকাশের করোনা পজিটিভ আসে। ওইদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহবাজ কিছু ওষুধ লিখে দেন। ওই ওষুধ গুলো নিয়মিত খাওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেন আকাশ। পাশাপাশি ঘরের মধ্যে গরম পানির ভাপ, ঘনঘন রং চা থেকে এবং গরম পানি পান করেন।

একপর্যায়ে আকাশের শাররীক অবস্থার উন্নতি হলে ২৪ মে টেস্ট করে ২৭ মে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। সবশেষ ২৮ তারিখে আমার বাবা-মা ও বোনেরও রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। আকাশের পরপর দুটো টেস্টে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প: প: কর্মকর্তা ডা. শাহবাজ বলেন, দেশের করোনার সংকটকালে করোনা রোগীদের প্লাজমা দেওয়া একটি মহৎ কাজ। এভাবে অন্যা করোনা জয়ীদেরও এগিয়ে আসা উচিৎ। যেখানে উন্নত দেশগুলো করোনাভাইরাসের চিকিৎসাসেবা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। সেখানে করোনা জয়ীরা প্লাজমা দিয়ে বড় ধরণের অবদান রাখতে পারা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। প্লাজমা দিলে শরীরের কোন সমস্যা হয়না। ভিটামিন জাতীয় খাবার খেলে দ্রুত পুরণ হয়ে যায় বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন