চকরিয়ায় জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট : মানছে না স্বাস্থ্যবিধি

fec-image

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কোরবানি আর বাকি মাত্র চার দিন। এরই মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়ায় জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানি পশুর হাট। লক-ডাউন শিথিল হওয়ার সাথে সাথে হাট-বাজারে বিভিন্নস্থান থেকে গাড়ি যোগে কোরবানি গরু আসতে শুরু করেছে। স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি এসব গরু চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন প্রান্তে।

করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি থাকলেও তা উপেক্ষা করে বর্তমানে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় প্রশাসনের অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং অনুমোদন ছাড়া অন্তত ২৫টি কোরবানি পশুর হাটে বেচাকেনা পুরোদমে জমে উঠেছে।

সরেজমিনে কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বেশিরভাগ কোরবানির পশুর হাটে বেড়েছে ক্রেতা সমাগম। স্থানীয় প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানি পশুর হাটে জনসমাগমের বিধিনিষেধ থাকলেও দৃশ্যত ক্রেতা সাধারণ তা লঙ্ঘন করে চলছেন। পশুর হাটে চলাফেলায় অনেকের নেই শারীরিক দূরত্ব সম্পর্কে কোন ধারণা। বেশিরভাগ পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে সচেতন করতে ইজারদার পক্ষথেকে মাইকিং করা হলেও মুখে মাস্কবিহীন ভাবে শারীরিক দূরত্ব বিধি লঙ্ঘন করে কোরবানির পশুর হাট বাজারে গুলোতে ঘুরছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে এবারের কোরবানি পশুর হাট-বাজারে

মাঝারি সাইজের এক একটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার এবং বড় সাইজের গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। গরুর পাশাপাশি এই হাটে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল ও মহিষ। একেকটি বড় আকারের খাসি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। অন্যান্য বাজারের তুলনায় ইলিশিয়া বাজারে এবারও সবচেয়ে বড় সাইজের গরুর দেখা মেলেছে ।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন বাজার ইজারাদারেরা। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক ও পশু বিক্রেতাদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, হাট-বাজারে আসা গরু পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোন ধরণের কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।

ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় করোনা পরিস্থিতিতেও বেশ জমে উঠেছে চকরিয়া পৌরসভার বাসটার্মিনাল, ঘনশ্যামবাজার, মগবাজার কমিউনিটি সেন্টার মাঠ, ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, সাহারবিল পরিষদ বাজার, বদরখালী বাজার, ডুলাহাজারা স্টেশন বাজার, খুটাখালী স্টেশন বাজার, হারবাং স্টেশন বাজার, বেতুয়া বাজার, বরইতলী গরুবাজারসহ অন্তত ২৫টির বেশি কোরবানীর পশুর হাট। প্রতিবারের মতো এবারও সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসেছে ইলিশিয়া জমিলা বেগম স্কুল মাঠে। ইজারাদার পক্ষের লোকজন পশুর হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সর্তক করতে মাইকিং করছেন। বলছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পশু বেচাকেনা করুন।

তবে উপজেলার বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে দেখা গেছে, হাটগুলোতে মাস্ক, হেন্ডগ্লাব্স ছাড়াই দুরত্ব না মেনে ক্রেতা-বিক্রেতারা পশু বেচাকেনা করছেন। এতেকরে পশুর হাটগুলোতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

ইলিশিয়া পশুরহাটে গিয়ে কথা হয় বদরখালী এলাকার পশু পালনকারী মানিক সিকদারের সাথে । তিনি জানান, ২ বছর ৪ মাস বয়সের একটি ফ্রিজিয়ান ষাড় গরু বাজারে এনেছেন। গরুটির ওজন একটনের চেয়ে বেশি বলে দাবী করছে। গরুটির দাম দেয়া হয়েছে ১০লক্ষ টাকা। ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হলেই তিনি বিক্রি করবে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো ক্রেতার সাক্ষাত মেলেনি বলে তিনি জানায়।

পূর্ব বড় ভেওলা সিকদার পাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, তিনি কোরবানির জন্য গরু দেখতে এসেছেন দামে পোষালে আজই কিনবেন। তবে এই হাটে পশুর দাম অন্যান্য বাজারের চেয়ে তুলনামূলক একটু কম।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন মোকাবিলায় কোরবানি পশুর হাটগুলোতে সবধরণের সুরক্ষামুলক উদ্যোগ নিতে আগে থেকে বাজার ইজারদার সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সজাগ ও সচেতন হতে হবে। তারপরও প্রশাসনের পক্ষথেকে পশুর হাটগুলোতে নজরদারি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের প্রমান পেলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন