নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : লক্ষাধিক জনসাধারণ পানিবন্দি

চকরিয়ায় টানা ভারিবর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে পানি বিপদ সীমার উপরে

কক্সবাজারের চকরিয়ায় টানা চারদিনের ভারিবর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানি অব্যাহত থাকায় বর্তমানে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বরইতলী ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা করছেন উপজেলাবাসী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত চারদিন ধরে টানা মুষলধারে বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ী ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। শতশত বসত ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতেই নদীর ভাঙ্গন কবলের আশঙ্কা রয়েছে কোনাখালী কাইদ্যার দিয়া, বিএমচরের কইন্যারকুমসহ বিভিন্ন পয়েন্ট।

বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ও নদীর পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকায় কালভার্ট, ব্রিজ ও অধিকাংশ রাস্তাঘাট বন্যার পানির নিচে রয়েছে। অভ্যান্তরীণ সড়ক গুলো পানিতে ডুবে থাকায় বেশ কিছু এলাকায় নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় উপজেলার নিত্য নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানান, বন্যার পানি ও ভারিবর্ষণে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলে দেওয়া হয়েছে ২নং ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়ার সুইচ গেটটিও।

তিনি আরও বলেন, ৫নং ওয়ার্ডের একাধিক স্থানে বন্যার পানি থাকায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পৌরশহরকে জলবদ্ধতা মুক্ত রাখতে সবধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি সরানোর জন্য জনবল সকাল থেকে কাজ শুরু করছেন।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানিয়েছেন, বন্যার পানির প্রবল স্রোতে রাতে তার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির পাওয়ায় স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান জানিয়েছেন, তার ইউনিয়ন মাতামুহুরী নদীর নিকটতম হওয়ায় দ্রুত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড়ধরণের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, ভারিবর্ষণের ফলে তাঁর ইউনিয়নের বেশিরভাগ নীচু এলাকা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে চকরিয়া চিংড়িজোনখ্যাত চরণদ্বীপ ও সওদাগরঘোনায় হাজার হাজার একর চিংড়িঘেরে বন্যার পানিতে পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে ঘের মালিক ও মৎস্য চাষিদের বড় ধরণের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে।

কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার জানান, মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি বন্যা নেমে আসার পর বিভিন্ন শাখাখাল ও স্লুইচ দিয়ে তাদের ইউনিয়নে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। ইউনিয়নের অধিকাংশ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। উপকুলের বিস্তীর্ণ মৎস্য প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীতে ঢলের পানি গতি বাড়বে। উপকুলের একাধিক বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়লে মৎস্য প্রকল্প সমুহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।

বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার জানান, তার ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, পহরচাঁদা ও মইচ্ছনাকাটার লোকালয়ে ঢুকছে ঢলের পানি। হাফালিয়া কাটায় পাহাড় ধসে মোহাম্মদ হারুন (৪২) নামের এক ব্যবসায়ি মৃত্যু হয়েছে। তার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ভারিবর্ষণে উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেইট সমুহ পরিদর্শন করা হয়েছে। যেসব এলাকা বন্যা ঝুকিতে আছে, জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে প্রধান করে মনিটরিংসেল খোলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন