চকরিয়ায় প্রবাসী হিন্দু পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের হুমকি!

fec-image

চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে প্রবাসী হিন্দু পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের হুমকির পাশাপাশি মামলায় জড়িয়ে হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের ইন্ধনে কতিপয় চক্র ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পাগলিরবিল উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার প্রণব কান্তি দে, রূপন কান্তি দে ও সুমন কান্তি দে নামের ওমান প্রবাসি তিন ভাইয়ের পৈত্রিক জমিজমা এবং বাড়িভিটা অবৈধভাবে জবরদখলের কুমানষে হামলার পাশাপাশি নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এমনকি প্রবাসীসহ পরিবারের থাকা লোকজনকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবারটির গৃহকর্ত্রী প্রবাসি প্রণব কান্তি দে’র স্ত্রী সুমা রানী দে। এ অবস্থায় কতিপয় দখলবাজ চক্রের নানামুখী হুমকির মুখে পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন সুমা রানী।

অবশ্য স্বামীর পরিবারের পৈত্রিক বাড়িভিটা মেধাকচ্ছপিয়া মৌজার বিএস ১৫৯ নং খতিয়ানের বিএস ২৪০ দাগের জমি দখলে হামলা ও হুমকি দেয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যে গৃহকর্ত্রী সুমা রানী দে (৩২) বাদি হয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর চকরিয়া থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছেন। এজাহারে স্থানীয় রনজিদ দে’র স্ত্রী সন্ধ্যা দে, মৃত বরদা চরণ দে’র ছেলে নগর দে, মৃত বিণয় চন্দ্র দে’র ছেলে রনজিত দে, সজিব দে ও লাল মোহন দে নামের পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে থানায় অভিযোগ দেয়ার ঘটনাটি জানতে পেরে অভিযুক্তরা ফের বেপরোয়া আচরণ করতে শুরু করে বলে অভিযোগ সমি রানীর। একপর্যায়ে বাদি সুমা রাণী দে’র অভিযোগটি তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দেয়। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে গত ২০ সেপ্টেম্বর চকরিয়া থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি জিডি (নং ৯১৫) দায়ের করেছেন গৃহকত্রী সুমা রানী দে।

বাদি সুমা রাণী দে অভিযোগ তুলেছেন, থানায় এজাহার দাখিল পরবর্তীতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জিডি করার পর থেকে তাঁরা আমার প্রবাসি স্বামীর পৈত্রিক জমিজমা ও বাড়িভিটা দখলে অভিযুক্তরা নানাভাবে হাকাঁবকা করছে। এতে নিরুপায় হয়ে তাদের বিরুদ্ধে গত ২৫ সেপ্টেম্বর চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি এমআর মামলা (১৫৪/১৯) দায়ের করেছি।

মামলার আর্জিতে বাদি সুমা রানী দে জানান, স্বামীর পৈত্রিক অংশের উল্লেখিত বাড়িভিটায় সম্প্রতি সময়ে পুরানো বাড়ি ভেঙ্গে নতুনভাবে পাকা বসতি নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। স্বামী ও দেবররা প্রবাসে থাকেন। বাড়িতে থাকেন বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি, কলেজ পড়ুয়া দেবর ও দুই শিশু সন্তান। প্রতিবাদ করার মতো বাড়িতে কোন পুরুষ সদস্য না থাকার সুযোগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তরা ফের অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নতুন বসতবাড়ি নির্মাণ কাজে উপস্থিত হয়ে বাধা দেন।

এ ঘটনার জেরে আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু অভিযুক্তরা পুলিশের নোটিশ অমান্য করে থানার সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত হয়নি। সেই থেকে তাঁরা আমার পরিবারকে নতুন বাড়ি নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। উল্টো মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাদেরকে হয়রানি করে আসছে।

বাদি সুমা রাণী দে অভিযোগ করেছেন, স্বামীর পৈত্রিক বাড়িভিটা দখলে হামলা ও নতুন বাড়ি নির্মাণে বাধা দেয়ার পেছনে বিবাদিপক্ষের লোকজনকে ইন্ধন দিচ্ছেন স্থানীয় মৃত বরদা চরণ দে’র ছেলে নগর দে। অভিযুক্ত নগর দে কক্সবাজার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এমএলএসএস পদে কর্মরত। মুলত তাঁর ক্ষমতার দাপটে অভিযুক্তরা আইনের কোন ধরণের তোয়াক্কা করছেনা। এমনকি থানা ও আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনের আশ্রয় নিলেও অভিযুক্ত বিবাদিরা তা অমান্য করে আমার স্বামীর পৈত্রিক বাড়িভিটার জমি দখলে নিতে নানাভাবে অপচেষ্ঠা চালিয়ে আসছে। পাশাপাশি আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমার স্বামী ও দেবররা বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরলে তাদেরকে মামলায় জড়িয়ে এলাকাছাড়া করবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।

ভুক্তভোগী সুমা রানী দে বলেন, অভিযুক্ত বিবাদিদের অব্যাহত হুমকি এবং তাদের পেছনে ইন্ধনে জড়িত নগর দে’র ক্ষমতার দাপটে আমার পরিবার অসহায়। এরই জেরে আমি নিরুপায় হয়ে সম্প্রতি সময়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের এমএলএসএস পদে কর্মরত চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বাসিন্দা মৃত বরদা চরণ দে’র ছেলে নগর দে’র বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য হাইর্কোট বিভাগের মাননীয় প্রধান বিচারপতির দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। একইসঙ্গে অভিযোগের অনুলিপি জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, অতিরিক্ত চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা পুলিশ সুপার, দুর্নীতি দমন কমিশন, চকরিয়া থানার ওসিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন