parbattanews

চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি : দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

চকরিয়ায় পানিবন্দী মানুষ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তৎমধ্যে শুধু নব্বইটি রয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও কলেজ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আগষ্ট মাসের শুরুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা থাকায় মানষিক চাপে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নিম্নাঞ্চলের বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ প্লাবিত হয়ে একাকার। ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকার্যক্রম ও পড়া-লেখা নিয়ে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে বানের পানি সামান্য কমলেও শনিবার ভোর থেকে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় রান্নার কাজও করতে পারছে না। বর্তমানে শতশত পরিবার অর্ধহারে-অনাহারেও রয়েছে। বানবাসি মানুষের জন্য এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী পৌছায়নি। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলেও সামান্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে সন্তোষ নয় বলে জানান বন্যার্তরা।

এদিকে সৃষ্ট বন্যার ফলে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি কলেজ, ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি মাদ্রাসা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে কৈয়ারবিল, কাকারা, হারবাং, বমুবিলছড়ি, বরইতলী ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করায় শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে পারছে না। আগষ্ট মাসের ১১ ও ১২ তারিখ প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীদের মানষিক চাপ বাড়ছে। এতে ৩০হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবকমহলেও চরম ভাবে দু:চিন্তায় রয়েছে।

মানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তাঘাট গুলো এখনো ঢলের পানিতে ডুবে রয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢলের পানি প্রবেশ করায় শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান।

উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার বিকাশ ধর জানান, গত সাতদিন মুষল ধারে মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে গেলেও শ্রেণিকক্ষে ঢলের পানি থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, কয়েকটি ইউনিয়নের স্কুল পরিদর্শন করা হয়েছে। সুযোগ পেলেই পাঠদান শুরু করতে বলা হয়েছে। স্কুল বন্ধের ব্যাপারে সরকারি ভাবে কোন নিদের্শনা নেই বলে জানান তিনি।

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, চকরিয়ায় বন্যার কারণে ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫টি মাদ্রাসা ও ৩টি কলেজ বন্ধ রয়েছে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখতে বলা হয়নি। মুলত ঢলের পানি কারণে শ্রেণিকক্ষে ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে গেলে পূনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি জানান।

চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আকতার বলেন, বিগত এক সপ্তাহ ধরে টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার ১৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মধ্যে বর্তমানে ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। যে সমস্ত বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে তা সরকারী ভাবে কোন ধরণের নির্দেশ ছিলনা। বন্যার পানিতে বিদ্যালয় সমূহ নিমজ্জিত হওয়ার কারণে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে গেলেও শ্রেণিকক্ষে ঢলের পানি থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারছে না বলে জানান তিনি।

Exit mobile version