parbattanews

চকরিয়ায় বাড়ছে কৃষিযন্ত্র ব্যবহার: কমেছে সময় ও শ্রমিক সংকট

শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই আলোকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার যন্ত্রের সাহায্যে কম সময়ে ধান কাটা ও মাড়াই করতে পেরে খুশি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার প্রান্তিক চাষীরা। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ, সময়মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় বোরো চাষে আশানুরূপ ফলন হয়। ফলে বোরো চাষে ১৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। যা অর্জিত হয়েছে ৭০ হাজার ৭১৪ মেট্রিক টন চাল। তা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৫৫ মেট্রিক টন বেশি। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের ফলে দিন দিন কৃষিখাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে যখন বোরো ধান সোনালি বর্ণ ধারণ করে, তখন শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা বেড়ে যায়। যার প্রেক্ষিতে ধান কাটা ও মাড়াই করতে একবারে শ্রমিক পাওয়া নানা সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকের। শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে ৭০ ভাগ ভুর্তকি মূল্যে কৃষকদের কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন সরবরাহ করা হয়।

চকরিয়ায় বর্তমানে ৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন দিয়ে বোরো ধান কাটা মাড়াই চলছে। প্রতি একর জমির ধান কাটতে বর্তমানে যেখানে শ্রমিক খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। এরপরও সময় মতো শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। সেখানে কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটতে খরচ পড়ছে প্রতি একরে মাত্র ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বাড়তি খরচ ছাড়াই স্বল্প সময়ের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা।

ডুলাহাজারা ডাক বাংলো পাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মতলব জানান, কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা, মাড়াই করে বস্তায় ভর্তি ধান পাওয়া যায়। এতে তিনি খুশি বলে জানান। চলতি মৌসুমে বোরো চাষাবাদ করেন প্রায় তিন একর। প্রতি কানিতে তার ৩-৪ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান।

একই এলাকার কৃষক শামসুল আলম বলেন, তিনি এবার দুই একর জমির ধান কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে কেটে ধান ঘরে তুলেছেন। একদিকে যেমন শ্রমিক সংকট দূর হয়েছে, তেমনি সময়ও কম লেগেছে বলে জানান।

চলতি মাসে ধান কাটার মৌসুমে হঠাৎ করেই সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে অনেক জমির বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। ফলে ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায় কৃষকরা। ওই সময় দ্রুত ধান ঘরে তুলতে কৃষকেরা কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহার করে ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হন। ধান কাটার মেশিনের সংখ্যা খুবই কম। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন জানান, বিভিন্ন কৃষি মাঠ দিবসে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার উপস্থাপন করা হলে স্থানীয় কৃষকরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আর এসব কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষিখাতেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষকের কমেছে শ্রম ও খরচ পাশাপাশি কয়েকগুণ বেড়েছে উৎপাদন। সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ও খামার যান্ত্রিকরণ প্রকল্পের আওতায় সরকারের ভুর্তকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার ও রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিনে ৮ থেকে ১০ একর জমির ধান কাটতে পারে। প্রথম দিকে এসব কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে কৃষকদের মাঝে কিছুটা অনীহা থাকলেও বর্তমানে এর চাহিদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।

Exit mobile version