parbattanews

চকরিয়ায় ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি, নেমে যাচ্ছে বাঁধের মাটি

চকরিয়া প্রতিনিধি:

চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালী ইউনিয়নের অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে তিনটি প্যাকেজের আওতায় ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী যথাসময়ে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হওয়ার কারণে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে কাজটি বুঝে নিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। এ অবস্থার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজটি সমাপ্ত করতে আরও ১০মাস অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, সরকারের এত বিশাল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিলেও কৌশলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজের বিপরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে বিল বাবত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

পাউবো বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬অর্থ বছরে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে তিনটি প্যাকেজের আওতায় চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদ পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের চোয়ারফাঁড়ি থেকে বদরখালীর টুটিয়াখালী পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণে কাজটি পেয়েছেন চট্টগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুছ এন্ড ব্রাদাস। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০জুন কাজটি সমাপ্ত করার কথা রয়েছে। কার্যাদেশের শর্তাবলী অনুযায়ী তিনটি প্যাকেজের আওতায় ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাধের উপরিভাগে (টপ) ১৩ ঘনফুট, সাইডে (স্লোথ) ওয়ান পয়েন্ট টু এবং ওয়ান পয়েন্ট থ্রি হিসেবে মাটি দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে চরম অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কার্যাদেশের শর্তাবলী লঙ্ঘন করে কোন কোন স্থানে ঠিকমতো মাটি দিলেও বেশির ভাগ স্থানে মাটির প্রলেপ লাগিয়ে দিয়ে কাজটি সমাপ্ত করেছে। ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে মাটি নিচে পড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি নিয়ে তা বাঁধে দেয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা পড়েছে আমার ইউনিয়নে। কাজের শুরুতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছতা দেখালেও পরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধের বেশিরভাগ স্থানে গোড়া থেকে মাটি নিয়ে বাধে দেয়া হয়েছে। সেই কারণে বেড়িবাঁধের অধিকাংশ এলাকা বর্তমানে ভেঙ্গে মাটি ফের নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গোড়া থেকে মাটি নিয়ে বাঁধে না দেয়ার জন্য ওইসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদেরকে অনুরোধ করেছিলাম আমি। কিন্তু তারা সেইসময় আমাকে উত্তর দিয়েছেন কাজের কার্যাদেশে না কী বাঁধের গোড়া থেকে মাটি নিয়ে বাঁধে দেয়ার শর্তাবলী রয়েছে। যেহেতু বাহির থেকে মাটি সংগ্রহের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে সেই কারণে আমি বিষয়টি নিয়ে আর বেশি কিছুই বলিনি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুছ এন্ড ব্রাদাসের প্রতিনিধি নুরে বশির সয়লাভ বলেন, কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর আমরা যথাসময়ে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করি। তবে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। সেই কারণে আমরা কাজটি সমাপ্ত করতে আগামী বছরের (২০১৯) সালের মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে আবেদন করেছি।

তিনি বলেন, নির্মাণ কাজে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি। তবে বাহির এলাকা থেকে মাটি সংগ্রহের কোন সুযোগ না থাকায় কিছু স্থানে বেড়িবাঁধের গোড়া থেকে মাটি নিয়ে তা বাঁধের নির্মাণ কাজে দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষে বেড়িবাঁধটি চলতিবছরের জুন মাসের মধ্যে আমাদেরকে বুঝে দেয়ার কথা ছিল। এখনো ২০ ভাগ কাজ বাকী রয়েছে। সেই কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি সম্পন্ন করতে সময়ের আবেদন করেছে। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার মাধ্যমে শতভাগ বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হলে ঠিকাদারকে বিলের টাকা ছাড় দেয়া হবে।

Exit mobile version