“২০১৫ সালে হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপটি ভোটার তালিকা তৈরিতে ব্যবহার করা হতো।”

চট্টগ্রাম ইসির ‘হারিয়ে যাওয়া’ ল্যাপটপ দিয়ে তৈরি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের এনআইডি!

fec-image

চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন কমিশন (ইসি) অফিস থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি ল্যাপটপ ব্যবহার করেই রোহিঙ্গাদের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি হচ্ছে বলে ধারণা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। ২০১৫ সালে হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপটি ভোটার তালিকা তৈরিতে ব্যবহার করা হতো।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন অফিসে দুদকের একটি দলের পরিদর্শনের পরই এ তথ্য সামনে আসে।

এনআইডি’র সার্ভারে সন্দেহজনক বিভিন্ন ভোটার তথ্য নিবন্ধনের পর দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি দল তদন্ত করতে চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন অফিস পরিদর্শন করেন।

দুদক কর্মকর্তাদের সন্দেহ, ইসি কর্মকর্তা ও স্থানীয় কিছু নেতার যোগসাজশেই রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয় দেওয়ার মতো অনিয়ম ঘটানো হচ্ছে। কারণ, নির্ধারিত কিছু কম্পিউটারের মাধ্যমেই শুধু এনআইডির তথ্য সার্ভারে নিবন্ধন করা যায়।

এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, “পঞ্চলাইশ থানা নির্বাচন অফিসের একটি বিশেষ ল্যাপটপ হারিয়ে যায়। ল্যাপটপ হারানোর জের ধরে ইসি কর্মকর্তারা কোনো জিডি পর্যন্ত করেননি। বিশেষ ওই ল্যাপটপটির আলাদা আইপি ঠিকানাসহ এনআইডির সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ছিল। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপটির সম্পর্কে কোনো তথ্যই নেই।”

তিনি আরও বলেন, “এনআইডি বানাতে সক্ষম হয়েছে এমন ১৫৪ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস আমাদের দিয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে, রোহিঙ্গাদের এনআইডি পেতে যারা সহায়তা করেছে তাদের আমরা খুঁজছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইসি কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় নেতাদের এ কাজে যোগসাজশ রয়েছে।”

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনির হোসেন খান জানান, রোহিঙ্গারা কীভাবে ভোটার হলো তা বের করতে দুদক তদন্ত শুরু করেছে।

তিনি বলেন, “দুদকের কর্মকর্তারা দুবার নির্বাচন অফিসে এসেছেন এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা বৈধ কাগজের ভিত্তিতেই লোকজনকে ভোটার হিসেবে নথিবদ্ধ করেছি। এ ক্ষেত্রে (পরিচয় গোপন করে এনআইডি পাওয়া) স্থানীয় জননেতাদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।”

হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপ সম্পর্কে মুনির হোসেন বলেন, “আমি অফিসে যোগদানের আগেই এ ঘটনা ঘটে। যাই হোক, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।”

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে তিন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার করে আকবার শাহ থানা পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে, ওই তিনজন স্বীকার করেন, নোয়াখালী পাসপোর্ট অফিস থেকে এক দালালের মাধ্যমে তারা পাসপোর্ট বানিয়েছেন। তারা পাসপোর্টে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেন।

একই দিনে চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিস এক রোহিঙ্গা যুবককে পরিচয় গোপন করে পাসপোর্ট বানানোর চেষ্টার সময় আটক করা হয়।

রোহিঙ্গাদের এনআইডি প্রাপ্তিতে ইসির কারো সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) কবিতা খানম বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ভোটার করা বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারির সম্পৃক্ততার সুর্নিদিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

কবিতা খানম বলেন, “আমরা মনেকরি না যে, নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী রোহিঙ্গাদের ভোটার করেছে বা জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সহযোগিতা করেছে। তারপরও আমরা বিষয়টা নিয়ে তদন্ত করছি। আমাদের একটা টিম আবার এখানে আসবে। অভিযোগ যদি আসে, আমরা অবশ্যই তদন্ত করব। তথ্যপ্রমাণ থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।”

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম ইসির, রোহিঙ্গাদের এনআইডি, হারিয়ে যাওয়া' ল্যাপটপ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন