parbattanews

চট্রগ্রামের ৩ শতাধিক ওমরাহ যাত্রীর এবার সৌদিআরব যাওয়া হয়নি

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান,টেকনাফ:

কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, চট্রগ্রামের সাতকানিয়া আমিরাবাদসহ বৃহত্তর চট্রগ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক ওমরাহ যাত্রীর এবার সৌদি আরবে পবিত্র ওমরায় যাওয়া হয়নি। রাজধানীর কতিপয় অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও “নো-ব্যাক” বানিজ্যের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

জানা যায়, প্রতি বছর পবিত্র মাহে রমজানের পূর্বে আরবী মাস রজব ও শাবানে পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যেতে বিত্তশালী ও মধ্যবিত্তের লোকজন রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভাগীয় শহর সমূহের সরকারী সনদ প্রাপ্ত নানা রিক্রুটিং এজেন্ট তথা হজ্ব ওমরাহ এজেন্সী সমুহের সাথে টাকা, পাসপোর্ট জমা দিতে যোগাযোগ শুরু করে। পবিত্র ওমরাহ পালন উপলক্ষ্যে সৌদি এ্যম্বেসী মাহে রমজান, আরবী মাস রজব ও শাবানে অনেক ক্ষেত্রে শিথিলতা ও দেখায়। এ সুযোগে ওমরাহর লাইসেন্সধারী কতিপয় এজেন্সীর মালিক সিন্ডিকেট করে যারা ওমরাহ করতে গিয়ে ফেরত আসবে, এমন জেনুইন ওমরাহ যাত্রীর পাশাপাশি ওমরাহ করে ফেরত আসবে না, এমন যাত্রীর জন্য এজেন্সী সমূহ অতি উৎসাহী ও ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারা ফেরত আসবেনা তাদের ভিসা টিকেটের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকল কাজ ও দ্রুত হয়। ফেরত না আসা যাত্রীদেরকে দালাল, এজেন্সী ও ইমেগ্রেশানের ভাষায় “নো-ব্যাক” যাত্রী বলা হয়। উক্ত “নো-বেক” যাত্রীদের নিকট থেকে টাকা ও নেয় প্রায় ৪গুন বেশী।

জেনুইন ওমরাহ যাত্রীদের ভিসা, টিকেট ইত্যাদি প্রসেসিং এ ৭০/৭৫/৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হলে ও “নো-ব্যাক” ওমরাহ যাত্রীদের নিকট থেকে নেয়া হয় ৩লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪লাখ টাকা মত। ফলে নো-ব্যাক ব্যবসা জমাতে জেনুইন (গো-ব্যাক)যাত্রীদের কোন গুরুত্ব দেয়া হয়না। টিকেট ক্রাইসিস, মোফা (ভিসার অনুমতিপত্র) আসে নাই। ওয়েটিং এ আছে, আসবে, ভিসা হবে ইত্যাদি নানা প্রতারনার জাল, ফন্দি আবিস্কার করে। এমন কি এতো তারিখ অমুক দিন ফ্লাইট, মানসিক ভাবে তৈরী থাকবেন, সব কিছু ঠিক আছে, অমুক দিন চলে আসেন বলে সংকেত ও দেয়া হয়। এভাবে রাজধানী তে ফ্লাইট হবে আশায় অনেকে এহরামের কাপড় পরে ও আসে। অনেকে সৌদিআরব নিতে হাদিয়ার চালান,চয়েজ মতে কেনা কাটা ও আত্বিয় স্বজন কে বিদায় এবং দোয়া নিয়ে চলে আসে।যেহেতু তার যাত্রা নিশ্চিত!

রাজধানীতে এসে দেখা যায় তার ভিন্ন চিত্র। ভিসা-টিকেট তো দূরের কথা। অসাধু এজেন্সীর লোকজন,দালালরা মোবাইল ফোন ও রিসিভ করেনা । “নো-বেক” বাণিজ্য নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে সর্বদা। বেশীর ভাগ বাণিজ্য হয় রোহিঙ্গাদের সাথে। তারা অপারগ বিধায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে হলে ও বিদেশ (সৌদিআরব) পাড়ি জমাবেই। এ সমস্ত বাণিজ্য ও প্রতারণার ফলে চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় জেনুইন ওমরাহ যাত্রীদের। এ সমুহ প্রতারণা ও “নো-ব্যাক” বাণিজ্যের ফলে এ বছর কক্সবাজার সহ বৃহত্তর চট্রগ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক ওমরাহ যাত্রীর এবার সৌদিআরবে পবিত্র ওমরায় যাওয়া হয়নি।

এদিকে অসংখ্য ওমরাহ যাত্রী ওমরায় যেতে না পারার নেপথ্যে রয়েছে সৌদি আরব সরকারের কড়াকড়ি, কতিপয় রিক্রুটিং এজেন্সীর মালিকের অনিয়ম,ও নানা দুর্নীতি। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছর রমজানের এ মৌসুমে পাচারে উদ্দেশ্যে অসাধু এজেন্সী মালিকগন যে কোন একটি নড়বড়ে এজেন্সীর ব্যানারে সারা দেশের প্রায় ১০/১২হাজার নো-ব্যাক ওমরাহর যাত্রীও হজ্ব যাত্রী সংগ্রহ করে।প্রতি যাত্রী সাড়ে তিন,চার লাখ টাকা করে নিয়ে “নো-ব্যাক” হিসেবে পাচার করে। বিনিময়ে কয়েক‘শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। উক্ত টাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ও ভাগবণ্টন হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সূত্রে জানা যায়,লাইসেন্স বাতিল হলে ও এতে সমস্যা নেই।একাংশ টাকা ব্যায় করে ও আরেকটি লাইসেন্স নেয়া যায়।এভাবে এই অসাধু চক্রটি সরকারের রাজস্বে ফাঁকি দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রম বাজার ধবংস করছে। বিদেশী কূটনীতিকরা ও বাংলাদেশী পেশাজীবি মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখে।

Exit mobile version