parbattanews

চতুর্থ তারাবির আজকের বিষয়বস্তু

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের পঞ্চম পারার দ্বিতীয়ার্ধ এবং পুরো ষষ্ঠ পারা; মোট দেড় পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা নিসা ৮৮ থেকে সুরা মায়িদা ৮২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত

এই অংশে রয়েছে :
* নামাজের গুরুত্ব
*দাম্পত্য জীবনে সমঝোতা ও বিচ্ছেদ
*মুনাফিকদের কূটচাল
*মানুষ হত্যা
*জিহাদ
*ইসা (আ.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র
*কুফর ও শিরক
*হালাল-হারাম খাদ্য ও বিধান
*হত্যা সংক্রান্ত
*পারস্পরিক সম্পর্ক
*বন্ধুত্বের নীতিমালা
*মানুষের অধঃপতনের কারণ
*সমাজসংস্কারের নানা দিক
*ইহুদিরা যে কারণে অভিশপ্ত
*হিজরত বিষয়ক
সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো—

যুদ্ধের ময়দানেও নামাজে ছাড় নেই
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। নামাজ মুমিনের সৌভাগ্যের সোপান, শ্রেষ্ঠত্বের কারণ। খোদার দরবারে প্রিয় হওয়ার মাধ্যম। ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা আবশ্যক। বড় কোনো সমস্যা ছাড়া জামাত ছাড়া নিষেধ। যারা জামাতে নামাজ পড়ে না, নবী (সা.) তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (হে নবী) আপনি যখন তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকেন ও তাদের নামাজ পড়ান, তখন (শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার সময় তার নিয়ম এই যে) মুসলিমদের একটি দল আপনার সঙ্গে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র সঙ্গে রাখবে। অতঃপর তারা যখন সিজদা করে নেবে, তখন তারা তোমাদের পেছনে চলে যাবে এবং অন্য দল, যারা এখনো নামাজ পড়েনি, সামনে এসে যাবে এবং তারা আপনার সঙ্গে নামাজ পড়বে। তারাও নিজেদের আত্মরক্ষার উপকরণ ও অস্ত্র সঙ্গে রাখবে।’ (সুরা নিসা: ১০২)

চিন্তা করুন, যুদ্ধের ভয়ালতম ঘনঘটায় আল্লাহ নামাজে ছাড় দেননি। অনিশ্চিত মুহূর্তেও আল্লাহ বলেননি, নামাজ ছেড়ে দাও। নামাজ তো দূরের কথা; জামাত পর্যন্ত ছাড়তে বলেননি। তাহলে কি নামাজ ছাড়ার কথা চিন্তা করা যায়!

দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা ও বিচ্ছেদ
১২৭ থেকে ১৩০ নম্বর আয়াতে মানুষের দাম্পত্য জীবনের নানা জটিল বিষয়ের সমাধান দেওয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হলো প্রীতি ও ভালোবাসার। অনেক স্বপ্ন বুনে তারা সংসার করে। একসঙ্গে থাকে। তবু কখনো কখনো নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। ঝগড়া-বিবাদ হয়। সংসার টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে।

দাম্পত্যজীবন বিষিয়ে উঠলে, স্বামী যদি স্ত্রীর সঙ্গে মন্দ আচরণ করে, স্ত্রীকে যদি অধিকার বঞ্চিত করে, তবে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সমঝোতা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করতে চেষ্টা করবে। প্রয়োজন হলে উভয় পক্ষ পারিবারিকভাবেও তা মীমাংসা করে নিতে পারবে।

পবিত্র কোরআনে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘যদি কোনো নারী তার স্বামী থেকে রূঢ়তা কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা পরস্পর আপস করে নিলে তাদের কোনো গুনাহ নেই, বস্তুত আপস করাই উত্তম।’ (সুরা নিসা: ১২৮)

তবে আপস করার সুযোগ না থাকলে অবশ্যই বিচ্ছেদ করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। ইসলাম কখনো নারীকে স্বামীর জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে যাওয়ার পরামর্শ দেয় না। বরং এ ক্ষেত্রে ইসলাম তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোর অনুমোদন দেয়। বরং ইসলাম মনে করে, স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে সংসার টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই।

হালাল-হারামের সুরা—সুরা মায়িদা
সুরা মায়িদা মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১২০। পবিত্র কোরআনের পঞ্চম সুরা এটি। মায়িদা অর্থ দস্তরখান। সুরাটিতে দস্তরখান সম্পর্কিত একটি ঘটনা থাকায় এর নামকরণ করা হয়েছে মায়িদা। শরিয়তের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধিবিধান এ সুরার মাধ্যমে প্রবর্তন করা হয়েছে। এ সুরায় যা হালাল-হারাম করা হয়েছে, চিরকাল সেটি হালাল-হারাম থাকবে। (তাফসিরে রুহুল মাআনি)

হারাম খাদ্যের তালিকা
সুরা মায়েদায় আল্লাহ তাআলা হারাম খাদ্যের বিবরণ দিয়েছেন। পৃথিবীতে হারামের তুলনায় হালালের সংখ্যা অনেক বেশি। মানুষ যা কিছু খেতে পারবে না,৩ নম্বর আয়াতে তার একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। যথা—
১. মৃত প্রাণী
২. (প্রবাহিত) রক্ত
৩. শূকরের মাংস
৪. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে বলি দেওয়া পশু
৫. যে প্রাণী গলা টিপে বা শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে
৬. আঘাতে নিহত প্রাণী
৭. উঁচু স্থান থেকে পড়ে মৃত
৮. সংঘর্ষে মৃত
৯. যে পশুকে হিংস্র জন্তু খেয়েছে। তবে এসব প্রাণী জীবিত জবাই করতে পারলে খাওয়া যাবে।
১০. মূর্তিপূজার বেদির ওপর বলি দেওয়া প্রাণী
১১. জুয়ার তির দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করা খাদ্য। আরবে তৎকালীন একটি রীতি।

মানুষ হত্যা অমার্জনীয় অপরাধ
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানুষ। মানুষকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীর সৃষ্টি। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা প্রকল্পে ইসলাম বলেছে, মানুষের ওপর চড়াও হওয়া হারাম। মানুষ হত্যা নিষিদ্ধ। মানুষকে গালি দেওয়াও পাপ। আল্লাহ বলেন, ‘এ কারণেই বনি ইসরাইলদের এই বিধান দিলাম যে, নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কারণ ছাড়া যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল। যদি কেউ একটি প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা: ৩২)

কাউকে মৃত্যু থেকে মুক্তি দেওয়া সমগ্র মানবসমাজকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার শামিল। কোরআন এ আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বাস্তবতার প্রতি ইঙ্গিত করেছে। তা হলো, মানুষের সমাজ হলো পরিপূর্ণ একটি দেহের মতো। সমাজের প্রতিটি মানুষ হলো সেই দেহের একেকটি অঙ্গ। এই সমাজের একটি অঙ্গের কোনো রকমের ক্ষতি হয় তার প্রভাব অপর অঙ্গের ওপর সুস্পষ্ট হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে, যার হাতে সকল মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি: ৯)

বিষয়বস্তুর বিশদ আলোচনা বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে বিদ্যমান।

আর এই রমজানে প্রতি তারাবিতে তিলাওয়াতকৃত আয়াতের বিষয়বস্তুর সারকথা ধারাবাহিকভাবে থাকছে।

Exit mobile version