parbattanews

চাঁদা না দেয়ায় কাউখালী-বটতলী সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিলো ইউপিডিএফ

যাত্রীর অপেক্ষায় সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিএনজিগুলো। কিন্তু কোন যাত্রী সিএনজিতে চড়বেনা। কিছু যাত্রী সিএনজিতে উঠলেও তাদের জন্য টেনে দেয়া হয়েছে সীমারেখা। সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহনকেও কাশখালী মসজিদ মার্কেটের ব্রীজ পর্যন্ত সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে পাহাড়ের আঞ্চলিক শসস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ।

এর ব্যতিক্রম ঘটলে সরাসরি গুলির হুমকীও দিয়েছে সংগঠনটি। এ যেন ভিন্ন কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সীমানা বা নো মেনস ল্যান্ড। চালকরা চাঁদা না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাঙ্গামাটির কাউখালী-বটতলী সড়কে এমন কাণ্ড ঘটায় ইউপিডিএফ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাউখালী সদর থেকে কাশখালী হয়ে দূর্গম বটতলী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। পূর্বে কাশখালী মসজিদ মার্কেট এলাকা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করলেও পরবর্তী রাস্তা সম্প্রসারিত হওয়ায় উপজেলা সদর থেকে বটতলী পর্যন্ত সিএনজিসহ অন্যান্য যান চলাচল শুরু করে। কিন্তু বছরের শুরু থেকে ইউপিডিএফ শ্রেণী ভেদে প্রতি যানবাহনের চাঁদা নির্ধারণ করে দেয়। এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালকদের ডেকে নিয়ে বিগত দু’বছর ও চলতি বকেয়াসহ মাথাপিছু তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে বিশেষ টোকেন নিতে বলে। এতে চালকরা রাজী না হওয়ায় বটতলী সড়কে গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

উপজেলা সদর থেকে কাশখালী মসজিদ মার্কেট বাঙ্গালী পাড়া পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করলেও উপজাতীয় যাত্রীদের গাড়ীতে উঠতে নিষেধ করে দেয়। সন্ত্রাসীদের ভয় উপেক্ষা করে কাশখালী পর্যন্ত কিছু সিএনজিতে উঠলেও তাদের আতংকে থাকতে হয়। ফলে সদর থেকে বটতলী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার পাহাড়ের উঁচু নিচু রাস্তার পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে। সপ্তাহিক হাঁট বারে সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগে পড়তে হয় এসব অসহায় মানুষগুলোকে।

কাশখালী-বটতলী সড়কের সিএনজি চালক উচিংমং মারমা (৪০) জানান, সারাদিন গাড়ি চালিয়ে সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। তাদের এহেন হটকারী সিদ্ধান্তে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি।

বটতলীর কৃষক চাইহ্লাঅং মারমা (৪৫) জানান, গাড়ি না থাকায় ভোর ৫টায় তরকারী নিয়ে পায়ে হেঁটে বাজারে এসেছি। অনেক কষ্ট হয়েছে। হাটহাজারীর একটি স্কুলে পড়ে বটতলীর মনু মারমা (১২) জানান, অনেকদিন পর বাড়ি এসেছি বেড়াতে। পায়ে হেঁটে বাড়ি যেতে হবে শুনে অকে কষ্ট হচ্ছে। তবুও যেতে হবে কিছু করার নেই।

যাত্রী না থাকায় এ সড়কের শতাধিক সিএনজি চালকদের দিনভর বেকার বসে থাকতে হচ্ছে। চালক বেলাল জানান, সন্ধ্যা হলেই মালিকের গাড়ীর ভাড়া পরিশোধ করে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

এদিকে যৌথবাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী অব্যাহত অভিযানে কোনঠাসা ইউপিডিএফ। গত দু’মাসের কাউখালীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নগদ টাকাসহ বেশ কয়জন ইউপিডিএফ’র চাঁদাবাজ আটক হয়। এরপর থেকে চাঁদায় নির্ভর ভেঙ্গে পড়া অর্থনৈতিক শক্তিশালী করতে তারা মরণ কামড় দিচ্ছে সাধারণ মানুষের উপর। বাৎসরিক ২০ হাজার নির্ধারণ করে গত ০৫-০৮-২০১৯ তারিখে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। যেসব ব্যবসায়ী চাইত টাকা পরিশোধ করবে না তাদের দোকানে কোন পাহাড়ি বাজার করতে বারণ করা হয়েছে। আতংকিত সাধারণ পাহাড়ীরা তাদের কথার বাইরে গেলে তালিকা করে করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

কাউখালী স্থায়ী ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দিন জানান, ব্যবসা বানিজ্যে এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে কাশখালী সেনা ক্যাম্প পূণঃস্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে।

Exit mobile version