parbattanews

চাক সম্প্রদায়কে ধর্মান্তরকরণ: আঞ্চলিক পরিষদের তদন্ত টিম নাইক্ষ্যংছড়িতে

Anssolik porsad
মো.আবুল বাশার নয়ন:
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ১১টি উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নবম সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় ‘চাক’। শুধুমাত্র নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বসবাসরত দেশের ক্ষুদ্র এ জাতি জনগোষ্ঠীকে ধর্মারিত করার অভিযোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের তদন্ত টিম নাইক্ষ্যংছড়িতে সরেজমিনে বাদী-বিবাদী ও সচেতন নাগরিকবৃন্দের মতামত সংগ্রহ করেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের হল রুমে প্রকাশ্যে মতামত গ্রহণ করা হয়।

এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য কেএসমং মার্মা বলেন- বাদী-বিবাদীর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে বৌদ্ধ ধর্ম ও খ্রিষ্ট ধর্ম মতবাদে তারা বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। যা নিয়ে আমাদেরকে আতংকিত হতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ম ভিত্তিক কোন এনজিওর স্থান নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, মিশনারীজরা মুর্শিদিপুজির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হয়ে নানান কায়দায় এনজিও ব্যুরোর সহায়তায় লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে প্রবেশ ঘটাচ্ছে। আর এ পুজির মাধ্যমে আমাদের অস্বীত্ব, আমাদের জাতীয়তাবোধ, দেশ প্রেমকে ধ্বংস করা হচ্ছে। মৌলাবাদ, উগ্রজাতিয়তাবাদ, সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ, আমলাপুজিবাদ আমরা বিরোধিতা করি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদ বলেন- চাক জাতির মধ্যে ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে যাতে কোন পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ইসলাম ধর্মে যিনি বিশ্বাস এনেছেন তার পক্ষে চাদেঁ মানুষ দেখা যাওয়ার কথা বিশ্বাস করার কথা নয়। তবে আমাদের দেশে এমনটিও হয়েছে। নিজস্ব ফায়দা হাসিলের জন্য একটি মহল এমন প্রপাগন্ডা ছড়ায়। তাই প্রত্যেক ধর্মের মানুষকে নিজ নিজ অবস্থানে সাবধান থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন- ধর্ম যার যার দেশ সবার। আর এ ধর্ম ব্যবহার করে যাতে কোন পক্ষকে প্রভাহিত করে দেশের কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য রয়েল ডেভিট বম, চিংহ্লা মং চাক, নাইক্ষ্যংছড়ি ছালেহ আহমদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক চানু অং চাক, জনসংহতি সমিতির সভাপতি মংমং মার্মা, তারগু মৌজা হেডম্যান মংনু মার্মা, চাইচিং অং কারবারী প্রমুখ। এসময় অভিযুক্ত মিশনারীজ টিমের প্রধান সুমন স্টিফেনও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ইং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় গণ শুনানী অনুষ্টিত হয়েছিল। ঐ শুনানীতে চাক সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ধর্মান্তরিত কাজে লিপ্ত জনৈক কালেব চাকসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তির দাবী জানিয়ে মতামত দিয়েছিলেন।

বাদী পক্ষের অভিযোগ- গত কয়েক বছর যাবত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা চাক নারী-পুরুষদের ধর্মান্তির করে আসছিল একটি মহল। তাদের পরিচালিত তথাকথিত খ্রিষ্টায়ান ধর্মীয় (বাংলাদেশ প্রধান কার্যালয় এপিএবি কমপ্লেক্স ছাত্র হোষ্টেল ও সানরাইজ হাই স্কুল দাতারাম চৌধুরী সড়ক, চৌধুরী হাট, ফতোয়াবাদ, হাটাজারী, চট্টগ্রাম) এবং ২য় শাখা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের রেষ্ট হাউজ সংলগ্ন কবির মৌলভীর ভাড়া বাসায় বসে ধর্মান্তরিত করার এ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এ মিশনের মাধ্যমে হাজার বছর ধরে ঐতিহ্যগতভাবে বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী ক্ষুদ্র চাক জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদেরকে নামে মাত্র পড়ালেখার খরচ যোগানের অজুহাতে আর্থিক প্রলোভন দিয়ে সম্পূর্ণ খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কৌশল অবলম্ব করে যাচ্ছে। যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে তারা বৌদ্ধ ধর্মে গিয়ে ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত হেনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে।

উল্লেখ্য, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, দোছড়ি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে সেবার নামে চাক নারী-পুরুষদের ধর্মান্তির করে আসছিল একটি মহল। বিষয়টি জানতে পেরে ৩২জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেতার স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি ২৯ অক্টোবর ২০১৪ইং প্রধানমন্ত্রীসহ ৬টি মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার সংস্থা, বিজিবি-পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসিসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ সমিতি এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে অনুলিপি পাঠানো হয়।

Exit mobile version