ভারত ও চীন সীমান্তবর্তী রাজ্যের বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর সাথে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে মিয়ানমারের জান্তা সরকার বেইজিংয়ের উপর তার অত্যধিক নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে সামরিক সরবরাহ এবং অবকাঠামো ও শক্তি প্রকল্প নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক প্রসারিত করছে। মিয়ানমারের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক মন্ত্রী ডঃ কান জাও সম্প্রতি মস্কো সফর করেছেন। গভীর-সমুদ্র বন্দর, স্পেশাল ইকোনোমিক জোন, পেট্রোলিয়াম শোধনাগার, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র (৬৬০মেগাওয়াট) এবং ৩৩০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য বন্দোবস্তের সুযোগ খুঁজতেই কান জাও- এর এই সফর বলে জানা গেছে।
গত বছর মিয়ানমার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তার বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করতে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে জান্তা সরকার। অংশীদারিত্বের ক্রমবর্ধমান গতিপথের সাথে পরিচিত ব্যক্তিদের মতে, জান্তা নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২৩ সালের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে ৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। গত অক্টোবর থেকে মিয়ানমার জান্তা ও জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই তীব্র হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার-রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে ।
ইকোনোমিক টাইমস (ইটি) মোতাবেক, সিটওয়ে নৌ ঘাঁটির প্রধান নৌবাহিনীর জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য গত অক্টোবরে রাশিয়া সফর করেছিলেন এবং গত নভেম্বরে প্রথম সামুদ্রিক নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সিটওয়ে নৌ ঘাঁটির প্রধান যখন রাশিয়া সফর করেন তখন ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ভারত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে মাল্টিমোডাল সংযোগের জন্য সিটওয়েতে একটি বন্দর তৈরি করেছে এবং সিটওয়ে শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ৪০৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অন্যান্য সরঞ্জামের মধ্যে সুখোই যুদ্ধবিমান এবং রকেট লঞ্চার সহ মিয়ানমারের সামরিক হার্ডওয়্যারের বৃহত্তম সরবরাহকারী হিসাবে রাশিয়া আবির্ভূত হয়েছে। মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনবার রাশিয়া সফর করেছেন।
২০২২ সালে মিয়ানমারকে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) একটি সংলাপে অংশীদার করা হয়েছিল।
ইটি জানতে পেরেছে যে, রাশিয়া মিয়ানমারকে স্নাইপার এবং ড্রোন প্রশিক্ষণে সহায়তা করছে দুটি প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি – ওয়াগনার এবং ভেগা স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসের মাধ্যমে এবং তাদের বিশেষজ্ঞরা মিয়ানমারের মাটিতে উপস্থিত রয়েছে যেখানে জাতিগত গোষ্ঠীগুলি সক্রিয় রয়েছে। মজার বিষয় হলো, রাশিয়ার পারমাণবিক প্রধান রোসাটম মিয়ানমারকে ছোট মডুলার রিঅ্যাক্টর সরবরাহ করতে পারে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, মস্কোর সহায়তায় ইয়াঙ্গুনে প্রথম পারমাণবিক প্রযুক্তি তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছিল।ভারত সরকার আবার মিয়ানমারের চীনের চেয়ে রাশিয়ার কাছাকাছি অবস্থানের বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারে, কারণ চীন মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে এর প্রভাব বৃদ্ধির জন্য দেশটিকে ব্যবহার করছে।
মনে রাখা প্রয়োজন, ভারত অতীতে যে সাবমেরিনগুলি মিয়ানমারকে সরবরাহ করেছিল সেগুলি রাশিয়ার তৈরি।
সূত্র : ইকোনোমিক টাইমস