parbattanews

চীন-মিয়ানমার সম্পর্কে ফাটল দৃশ্যমান

ফাইল ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ চীন-মিয়ানমার। বরাবরই মিয়ানমারের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত চীন। তবে এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাঁটল ধরতে শুরু করেছে। যার ফলশ্রুতিতে রোহেঙ্গা ইস্যুতে এবার মিয়ানমারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারে চীন ধারণা বিশেষজ্ঞদের। আর এমন তথ্যই দিচ্ছে মিয়ানমার ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইরাবতী নিউজ।

 বুধবার (২৭ নভেম্বর) দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র মায়ো মিন সো দাবি করেছেন, সরকার বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সতায়তা করছে চীন।

তিনি বলেন, তা`আং জনগোষ্ঠী সমর্থিত টিএনএলএ নামক এক চরমপন্থী সংগঠনের সদস্যরা আরপিজি এবং এফএন ৬ এর মত বিমানবিধ্বংসী রকেট লঞ্চারসসহ বিভিন্ন ধরনের চীনা সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে। এসব সমরাস্ত্রের অধিকাংশই চীনে তৈরি। মিয়ানমারের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ছাড়াও সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি এলাকায় এই সংগঠনের সক্রিয় তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় বলেও জানান তিনি।

দেশটির সেনাবাহিনীর অনুসন্ধানি তথ্যের বরাতে বার্তা সংস্থাটি জানায়, উত্তরাঞ্চলীয় এই বিদ্রোহীরা হালকা ওজনের স্বল্প পাল্লার শক্তিশালী শান স্টেট এফএন-৬ সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল লঞ্চার ব্যবহার করছে , যার প্রতিটির দাম প্রায় ৯০,০০০ মার্কিন ডলার। এসকল মিসাইল লঞ্চারের একমাত্র প্রস্তুতকারক দেশ চীন।

আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি সমরাস্ত্রের কালোবাজারের তথ্য মতে ধারণা করা হয় যে চীনে তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, সুদান এবং পাকিস্তানেও রফতানি করা হয়। এগুলি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ চীন এ সকল ক্ষেপনাস্ত্র নিজ তাগিদে কোথাও সরবরাহ না করলে সেগুলো অন্য কোনো পথে এই টিএনএলএ বিদ্রোহীদের হাতে পৌঁছানর কথা নয়।

শুধু তাই নয়, সমরাস্ত্রের পাশাপাশি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অর্থযোগের মাধ্যম হিসেবেও চীনের ভূমিকার কথা দাবি করে মিয়ানমার।

মিয়ানমার প্রশাসনের বরাতে সূত্র জানায়, এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি স্থানীয় কর, মাদক, চাঁদাবাজি এবং তাদের নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি সংস্থা থেকে প্রচুর আয় উপার্জন করছে। দেশটির সেনাবাহিনীর ধারনা, চীনের সঙ্গেও এ ধরনের কোনো ইস্যুতেই সম্পৃক্ততা গড়ে উঠেছে বিদ্রোহিদের।

তবে মিয়ানমারের জন্য সবচেয়ে ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে দেশটির সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী বিদ্রোহী সেনাবাহিনী `ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডাব্লুএসএ)`।

মিয়ানমারের দাবি, এটি সেদেশের অন্যতম শক্তিশালী জাতিগত সেনাবাহিনী। ওয়া সেনাবাহিনী এখন অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থায় সজ্জিত, যার জন্য প্রত্যক্ষভাবে চীনকে দায়ি বলে অভিযোগ করেছে মিয়ানমার।

সেনাবাহিনী বর্তমানে রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান এবং ইউক্রেনের পাশাপাশি চীন থেকেও অস্ত্র ক্রয় করছে বলে জানা গেছে। পশ্চিমা দেশগুলি মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে অতীতে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং সুইডেন সহ বেশিরভাগই মিয়ানমারে অস্ত্র, ভারী সামরিক সরঞ্জাম ইত্যাদি বিক্রি করতো।

 অপরদিকে মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে যে, বিভিন্ন সময় দ্বি-পাক্ষীক বিভিন্ন প্রকল্প উন্নয়ন ও মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষীক সম্পর্ক জোরদারের ইস্যুতে ক্রমেই তাদের ক্ষেত্রকে সীমাবদ্ধ করে এনেছে চীন। তাছাড়া চীন প্রস্তাবিত নানা প্রকল্পে সম্পৃক্ততা, মিয়ানমারের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে দায়ি বলেও জানায় সু চি সরকার।

 মিয়ানমারের প্রতি চীনের এমন বিরুদ্ধচারণের কারণ হতে পারে বড় বড় চীনা প্রকল্প প্রত্যহার। তবে শুধু প্রত্যহারই নয় এর পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে ছেটে ফেলা হয়েছে বিনিয়োগ। এতে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর এমন প্রত্যক্ষ মন্তব্যের ফলে বেইজিংয়ের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক ভাঙতে চলেছে, এমনটাই দাবি স্থানীয় বার্তা সংস্থা সমূহের।

সূত্র: Banglainsider

Exit mobile version