parbattanews

চেংগীতে বিলীন হচ্ছে পানছড়ির শতবর্ষী বৌদ্ধ মন্দির

নিজস্ব প্রতিবেদক, পানছড়ি:

পানছড়ি উপজেলার শতবর্ষী বুদ্ধ মন্দিরটি চেংগী নদীর গর্ভে বিলীন হতে এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। মন্দিরের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বিশালাকার ভাঙ্গন।

এই ভাঙ্গনে মন্দিরের চারিপার্শ্বের বটতলাও প্রায় বিলীনের পথে। আট-দশটি বটবৃক্ষের মধ্যে এখন রয়েছে মাত্র চারটি। তাছাড়া নদীর ভাঙ্গনও প্রায় মন্দিরের কাছাকাছি। যে কোনো মুহুর্তে বিলীন হতে পরে নদীগর্ভে। তাইতো এই প্রাচীনতম মন্দিরটি রক্ষণা-বেক্ষণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখনই নেয়া দরকার বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, ১৮০০ সালের পূর্ব থেকেই পানছড়িতে শুরু হয় মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস। তখনকার সময় এলাকায় ছিল না কোন বৌদ্ধ বিহার। তাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ন করার জন্য ১৯১৫ সালে পানছড়ির চৌধুরী পাড়া (বর্তমানে কলেজ গেইট এলাকা) চেংগী নদীর পাড়ে একটি ছোট-খাট মন্দির নির্মাণ করা হয়। আদু গের মগিনীর হাতে তৈরী এই মন্দিরটির নামকরণ করা হয় মহাম্রাই মুনী মন্দির।

জানা যায়, সেই আমলে চেংগী নদী এত প্রশস্ত ছিল না। তখনকার চেংগী ছিল ছোট একটি ছরার মত যার দু’পাশ ছিল ঝোপ ও জঙ্গলে ভরপুর। আর মন্দির এলাকাটি ঘিরে রেখেছিল প্রায় দশ’টির মত বটবৃক্ষ। সেই বটবৃক্ষের ছায়াতলে পাক আমলে চৈত্র মাসে জমে উঠত বুদ্ধ মেলা। মাসের অধিক সময় ধরে থাকত মেলার আসর। মেলা উপভোগ করার জন্য দুর দুরান্ত থেকে লোকজন এসে জড়ো হয়ে মেলাকে করে তুলতো প্রাণবন্ত। কিন্তু কালের আবর্তে আজ সবই শুধু স্মৃতি। শুধু স্বাক্ষী হয়ে আছে মহাম্রাই মুনী নামক শতবর্ষী বুদ্ধ মন্দিরটি।

মন্দিরটির ব্যাপারে জানতে চাইলে পানছড়ি চৌধুরী পাড়া এলাকার হেডম্যান প্রতিনিধি মেমং চৌধুরী জানান, ১৯১৫ সালে নির্মাণ করা মন্দিরটি আদু গের মগিনী ১৯৩৫ সালে নতুনভাবে সংস্কার করেন। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা আদু গের বংশধর দুই ছেলে ও এক মেয়ে আজ বেঁচে নেই। তবে আদু গের মেয়ে আবাইতু মারা গেলেও তার পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে একমাত্র মেয়ে পাইচেং চৌধুরী (৯৫) এখনো বেঁচে আছে। বর্তমানে তারা এবং তাদের বংশধরেরা মন্দিরের দেখাশুনা করে থাকে। বিশেষ করে পাইচেং চৌধুরীর মেয়ে নাইম্রাসাং চৌধুরী প্রতিদিন দেখাশুনা ও পূজা অর্চনা করে। তাছাড়া ফুল চোয়াং (পূজা), হারিকেন ও মোমবাতি সারারাত ধরেই মন্দিরকে আলোকিত করে রাখে। দায়ক-দায়িকারা এটি রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছে।

Exit mobile version