চ থোয়াই মং মারমাকে উদ্ধারে সেনা-পুলিশের চিরুনী অভিযান চলছে

হঠাৎ করেই বান্দরবানে বেড়ে গেছে খুনোখুনি ও অপহরণের ঘটনা। গেলো একমাসে শুধুমাত্র সদর উপজেলায় ২টি অপহরণ ও ৩টি নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে। সবগুলো অপহরণ ও হত্যার নেপথ্যে আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস ও নব্য আবির্ভূত আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন মগ লিবারেশন পার্টির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র দাবী করেছে। তবে এই দুই পার্টির আধিপত্য বিস্তারের মধ্যে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী খুন হওয়ার কারণ জানাতে পারছে না স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনী।

সর্বশেষ বুধবার রাতে সদর উপজেলার উজি হেডম্যানপাড়া থেকে আওয়ামীলীগ নেতা চথোয়াই মং মারমাকে অপহরণের ২৪ঘন্টা পার হলেও এখনো উদ্ধার করা যায় নি অথবা তার অবস্থানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখনো এই অপহরণের ক্লু উদ্ধার বা কুল কিনারা বের করতে পারেনি।

এই ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের ধরতে পাহাড়ে এবার কোমর বেঁধে নেমেছে আইন শৃংখলা বাহিনী। বুধবার রাত থেকেই নতুন শক্তি নিয়ে এই অভিযান শুরু হয়। অভিযানের দ্বিতীয় দিনে বান্দরবানের রাজবিলা ও কুহালং ইউনিয়নের উজি হেডম্যানপাড়া, ত্রিপুরাপাড়া, বুড়িপাড়া, জর্ডানপাড়াসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে সাড়াশি অভিযান চালানো হয়। এছাড়াও সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃক নজরদারীতে রয়েছে সীমান্তের দূর্গম এলাকাগুলো।

এদিকে সেনাবাহিনী সূত্র জানিয়েছে, চ থোয়াই মং অপহরণের খবর শোনার পরপরই সেনাবাহিনী একাধিক টিম তাকে উদ্ধার অভিযানে নামে। তারা সন্ত্রাসীদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে গভীর রাত পর্যন্ত তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে। বৃহস্পতিবার থেকে সেনাবাহিনীর তিনটি টিম তাকে উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে বলে সেনা সূত্র নিশিচত করেছে।

বুধবার রাতে অপহৃত চথোয়াইকে অপহরণের তাৎক্ষণিক অভিযানের পর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দ্বিতীয় দফায় জেলা শহর থেকে প্রায় ২০কি:মি: দুরে পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা দূর্গম বুড়িপাড়া পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালায়। ধারণা করা হচ্ছিল উজিপাড়া থেকে অপহরণের পর দুষ্কৃতিকারীরা ত্রিপুরাপাড়া হয়ে বুড়িপাড়া দূর্গম এলাকায় আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে।

এই ধারণা থেকে অভিযানকালে দূর্গম এলাকায় সন্দেহভাজন বসতবাড়ি ও লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। অভিযানে খোদ পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার নেতৃত্ব দেন। এসময় তিনি বড় বড় পাহাড় অতিক্রম করে দূর্গম এলাকায় তল্লাশী চালান।

অভিযানকালে বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মো.এনামুল হক ভুইয়া, ওসি (ডিবি) তৌহিদ কবিরসহ শতাধিক পুলিশ সদস্য অংশ নেন।

অভিযান শেষে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেছেন, অপহৃত চথোয়াই মংকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশ বুধবার সারারাত অভিযান চালিয়েছে। অপহৃত ব্যক্তিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের জন্য বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। তাকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার আরো বলেন, চথোয়াই মংকে কারা অপহরণ করেছে তা এই মুহুর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের সবার পরনে জলপাই রঙের পোশাক ও অস্ত্র ছিল।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২২মে) রাত ৮. ৪৫মিনিটের দিকে ২নং কুহালং ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়াডের হেডম্যানপাড়া খামারবাড়ি থেকে চথোয়াই মং মারমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তিনি পৌর আওয়ামীলীগের নেতা ছিলেন।

এর আগে ৭মে রাজবিলা ইউনিয়নের তাংখালী সাইক্ষ্যংপাড়া থেকে অপহরণ হওয়া পুরাধন তংচঙ্গ্যাকে এখনো উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃংখলা বাহিনী। তিনি পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অপহরণ, আওয়ামী লীগ নেতা অপহরণ, চ থোয়াই মং
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন