parbattanews

ছিঁড়ে গেছে পানছড়ি রাবার ড্যাম: ধান ও মাছ চাষে অশনি সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক, পানছড়ি:

পানছড়ি উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বরাবর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে হাতের ডানে পঞ্চাশ কি একশ গজ দূরে গেলেই নজরে আসে চোখ জুড়ানো ও মন মাতনো শান্তিপুর রাবার ড্যাম। ভারত সীমান্ত থেকে চেংগী নদীর শ্রোতধারা পানছড়ি হয়ে খাগড়াছড়ির বুক চিরে সাপের মতো এঁকে বেঁকে গিয়ে পতিত হয়েছে চট্টলার বিখ্যাত কর্ণফুলীতে। এই চেংগীর দু’পার্শ্বে বোরো’র মাঠে সবুজের প্রাণবন্ত ঢেউয়ের নাচন, বাঁশঝাড় ও সবুজ অরণ্যের মাঝে পাখির কল-কাকলি আর শিল্পীর নিপুন হাতের কারিগরি আঁচড়ে তৈরি হয়েছিল ড্যামটি।

এ ড্যামের প্রাণবন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভীড় পানছড়িকে যেন সাজিয়ে রাখতো এক অপরূপ সাজে। কিন্তু ড্যামের রাবার ফেটে যাওয়ার ফলে এবার নেই দর্শনার্থী। তাছাড়া অযত্ন অবহেলায় ড্যামটি পড়ে আছে অবহেলিত অবস্থায়। যা ধান ও মাছ চাষে অশনি সংকেত। পানছড়ি শান্তিপুরস্থ রাবার ড্যাম এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ড্যামের বেহাল দশার চিত্র।

রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপায়ন চাকমা জানায়, রাবারের জয়েন্ট ছুটে গেছে তাই এবার পানি আটকানো যাচ্ছে না। এটা মেরামতের জন্য এক মাস আগে এলজিইডি অফিসে বলেছি তারা যোগাযোগ করে জানাবে বলেছে।

তিনি জানান, ড্যাম বাঁধ দেয়ার ফলে চেংগীর দু’পাশের প্রায় সাড়ে ছয়’শ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হতো। কিন্তু এবার ড্যামের বাঁধ হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন শেখ জানায়, বোরোর চাষ হয়েছে। তবে খরা দিলে প্রচুর পানির প্রয়োজন পড়বে। কারণ বোরো চাষ হয় সেচ দিয়েই। পরিমানমত পানি না পেলে কৃষকেরা ভালো ফলন পাবে না। এলজিইডি’র সাথে কথা বলে ড্যাম মেরামতের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয় কান্তি চাকমা জানায়, ড্যামে বাঁধ দেয়ার ফলে উপজেলায় মাছের উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এবার চেংগীতে পানি নেই তাই নানান জাতের মাছের উৎপাদন অনেকাংশে কমে যাবে।

এ ব্যাপারে পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস বলেন, রাবার ড্যাম সমবায় সমিতির মাধ্যমে সেচ কর আদায় করার কথা ছিল। সেচ করের টাকা দিয়েই ড্যামের মেরামত করার কথা। সেচ কর আদায় না করার ফলেই মেরামতে সময় লাগছে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। টেকনিক্যাল বিভাগের লোক এসেও সার্ভে করে গেছে। বর্তমানে বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ এলেই তা মেরামত করা হবে।

জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এ ড্যামটির টেন্ডার হলেও তা নির্মিত হয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে।  প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ড্যামটির টেকশই নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) ছিল ২৫ বছরের। কিন্তু ৪ বছর শেষ হতে না হতে বেহাল দশার কারণ হিসেবে অবহেলাকেই দায়ী করা হয়েছে। ড্যামটির যত্ন নেয়ার দায়িত্ব ছিল ড্যাম পরিচালনা কমিটির। কিন্তু  বর্তমানে এ ছেঁড়াফাটা ড্যামটি পূনঃ মেরামত করা হলেও তার স্থায়িত্বকাল কতদিন হবে তা এখন দেখার অপেক্ষায়।

Exit mobile version