জমি দখলদারদের অডিও ফাঁস: ‘মালিক পক্ষের কেউ আসলে মেরে বস্তা ভরে রাখবে’

fec-image

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া রফিকের ঘোনা এলাকায় বন বিভাগ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষিজমি জোরপূর্বক দখলের গোপন বৈঠকে দখলদার দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গত ১৯ এপ্রিল রাতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তার অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যাতে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।

বৈঠকে থাকা একজন ব্যক্তি নাম প্রচার না করার শর্তে জানান, জমি দখল করে প্লট বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা বিষয় নিয়ে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে দখলদার ইউপি সদস্য শেখ কামাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. কামাল উদ্দীন কামালের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এসময় উপস্থিত অন্যরা দুই ভাইয়ের মারামারি থামাতে চেষ্টা করেন।

সরেজমিন দেখা গেল, ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণ প্রকল্প’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে বন ও কৃষিজমি দখল করে নিয়েছে চিহ্নিত চক্রটি। পূর্বে নাম পাল্টে রাতারাতি ‘মুজিবনগর’ করেছে।

দখলবাজির কৌশল হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

কী উদ্দেশ্যে জমি দখল করা হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন হতে পারে? তা নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হয়। যার একটি অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অডিওতে আলোচনা, চিৎকার-চেঁচামেচি অতঃপর দখলদার দুই সহোদরের মধ্যে মারামারির শব্দ শোনা যায়।

বৈঠকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কথিত উদ্যোক্তা মো. কামাল উদ্দীন কামাল দাবি করেন, এখানে যারা এসেছে কেউ ভূমিহীন নয়। তারা শুধুমাত্র আমার ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছে। এ জন্য আমার ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখানে মালিক পক্ষের কেউ আসলে মেরে বস্তা ভরে রাখবে। আমি তো জমি একা খাওয়ার জন্য দখল করি নি।

তিনি বলেন, এখানে একটি মেয়ে সত্যিকার অর্থে গৃহহীন আছে ভাইদের আশ্রয়ে। তাকে তো জমি না দিয়ে পারব না। কিছু কিছু মানুষকে আমাদের জমি দিতে হবে। আমরা দুই ভাইকে পৃথক করতে একটি গ্রুপ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ, দুই ভাই মারামারি করে পৃথক হয়ে গেলে আমাদের দুর্বল করা যাবে।

আরেক দখলদার ইউপি সদস্য শেখ কামাল বৈঠকে বলেন, মালিকপক্ষের এক ভাই বিচারক, আরেক ভাই আনইনজীবী তারা প্রতিদিন সাংবাদিক পাচ্ছে, প্রশাসনকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। প্রশাসন আমাকে চাপ প্রয়োগ করছে। পত্রিকায় আমার নামে নিউজ আসছে। আমি নাকি ৩০ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছি।

তিনি বলেন, এসিল্যান্ড আমাকে এখানে (জমি দখলে) এনেছে। এখন সে অস্বীকার করছে নিজে বাঁচার জন্য। নিউজের কারণে আমার তো একসময় বিপদ হতে পারে। তাই পরামর্শ না করে কিছু করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, এমপি কমলকে কী বলব, অন্যান্যদের কী বলবো তা আমি ঠিক করে রেখেছি। পরামর্শ করে জমির দখল করতে এসেছি, এমনি আসিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. কামাল উদ্দীন কামাল বলেন, যেহেতু আপনার কাছে অডিও আছে। এ বিষয়ে আমাকে আর ফোন করার কী আছে? অডিওতে যা শুনেছেন তাই।

এদিকে, মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিকালে সরেজমিন তেতৈয়া রফিকেরঘোনা পরিদর্শনে যান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। এ সময় তার সামনেই জমির মালিকদের একজন হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানীকে নাজেহাল করেছে দখলবাজরা। তার গায়ের জামা ধরে বেশ কয়েকবার টান মেরেছে। মৌখিকভাবে উত্যক্তও করেছে। পরে এমপির গাড়িতে ওঠে রক্ষা পান বোরহান উদ্দীন রব্বানী।

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দখলকৃত জমির মালিক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ব্রিটিশ ভারতের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ফৌজ আর্মির সদস্য মৃত আবুল হোসেন। তিনি খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিন, হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানীসহ পাঁচজন ব্যক্তি এসব কৃষিজমির মালিক। রয়েছে বন বিভাগের সৃজিত সামাজিক বনায়নভুক্ত জমি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন