পূর্ণিমা চাকমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে: কাজি মুজিবুর রহমান

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজি মুজিবুর রহমান বলেন, পূর্ণিমা চাকমা আত্মহত্যা করেননি। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। বুধবার (০৩নভেম্বর) দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের আয়োজনে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পূর্ণিমা চাকমা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভাপতি কাজি মুজিবুর রহমান বলেন, পূর্ণিমা যে বাসায় ভাড়া থাকেন সেই বাড়ি মালিক জেএসএস সন্তু গ্রুপের নেতা। বাসার মালিক পূর্ণিমা চাকমাকে যৌন হয়রানি ও একাধিকবার ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্ণিমা চাকমা ধর্ষণের কথা প্রকাশ করে দেওয়ার ভয়ে তাকে হত্যা করা করেছে এবং পরবর্তীতে ঘটনা দামাচাপা দিতে চিকিৎসার জন্য রাঙাামাটি জেনারেল হাসপাতালেও নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, পূর্ণিমা চাকমার দরিদ্র পরিবারের উপর আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের প্রবল চাপের মুখে পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার সংগঠনসহ যারা নারী নির্যাতনের বিষয়ে ও উপজাতিদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সবাই এখন চুপ, কোন প্রতিবাদ করেনি।

মেয়েটি চাকমা সম্প্রদায়ের। তাদের সার্কেলের রাণী ইয়েন ইয়েন সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন পিএস বিল্ডিং অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ তার বাড়ির পাশে তারই প্রজা পূর্ণিমা চাকমা ধর্ষণ ও পরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে আসেননি চাকমা সার্কেলের রাণী। হত্যাকাণ্ডের দাবি জানাননি উপজাতি মানবাধিকার কমিশনের কর্মীরা। যারা দিন-রাত সেনবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়াতে থাকে। পূর্ণিমা চাকমার খুনীরা যতই প্রভাবশালী হউক না কেন তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানান।

এদিকে পূর্ণিমা চাকমার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে গত সোমবার রাতে রাঙামাটির কোতোয়ালি থানায় অভিযোগটি দায়ের করেন পূর্ণিমা চাকমার মামাতো ভাই পলাশ চাকমা।

কোতোয়ালি থানার ওসি মো. কবির হোসেন অভিযোগ দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ওসি জানান, ‘কলেজছাত্রী পূর্ণিমা চাকমার এক আত্মীয় অভিযোগ জমা দিয়েছেন, সেটা আছে এবং আগেই একটি অপমৃত্যু মামলা আছে। পুলিশ তদন্ত করছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।’

মামলার অভিযোগে পলাশ চাকমা বলেন, ‘গত শুক্রবার দুপুর দেড়টায় (২৯ অক্টোবর) মল্লিকা দেওয়ান ও অঞ্জলী চাকমা (গান্ধী) আমার বোন পূর্ণিমা চাকমার লাশ রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে। পরে আমি পূর্ণিমার গৃহকত্রী মল্লিকা দেওয়ান ও নিকিতা দেওয়ানের কাছে মৃত্যুর বিষয়টি জানতে চাইলে তাদের রহস্যজনক উত্তর ও আচরণে বুঝতে পারি আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।’

পলাশ চাকমা জানিয়েছেন, ‘আমার বোনকে খুন করে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচারের পর মল্লিকা দেওয়ান ও তার পরিবারের লোকজনকে আমাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমরা তো টাকা দিয়ে দফারফা করতে চাই না। টাকা দিয়ে তো বোনকে ফিরে পাব না। আমরা বোন হত্যার বিচার চাই। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিচার চাই।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সদস্য সচিব মো. মামুনুর রশীদ মামুনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মো আলমগীর কবির, দলটির জেলার কমিটির সহ-সভাপতি কাজী জালোয়া, নাদিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, সহ-সভাপতি, কাজি জালোয়া প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কলেজছাত্রী পূর্ণিমাকে অচেতন অবস্থায় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা শুনে উধাও হয়ে যান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা। ঘটনার পরদিন শনিবার দুপুরে পূর্ণিমা চাকমার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ।

কলেজছাত্রী পূর্ণিমা চাকমা জেলার জুরাছড়ি উপজেলার ৪ নম্বর দুর্গম দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বগাখালী এলাকার সাধন চাকমার মেয়ে। সে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। পড়ালেখার সুবাধে জেলা শহরের রাজবাড়ী এলাকার মল্লিকা দেওয়ানের বাসায় থাকতো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন