parbattanews

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পাহাড়ে অশান্তির আশঙ্কা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির

পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। নীরব ঘাতক হয়ে কেএনএফ এর মত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি গোষ্ঠীর সম্মুখীন হচ্ছে পাহাড়ে বসবাসকারী সাধারন মানুষ। এতে পাড়া-মহল্লায় মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত রয়েছে ।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং জঙ্গিগোষ্ঠী সম্পৃক্ত হওয়ায় সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কোনো সময় অবনতি হতে পারে। এতে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট নাও দিতে পারে। এ জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের আগে পার্বত্য অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা যায়।

আলোচনা সভায় কমিটির সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘পার্বত্য এলাকায় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কারণে প্রায়ই অশান্ত থাকে। তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই ৩ পার্বত্য জেলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন।’

দীপংকর তালুকদার আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, চাঁদাবাজদের কোণঠাসা করে রাখার ব্যবস্থা করতে আমরা সুপারিশ করেছি। যাতে করে পার্বত্য অঞ্চল শান্তিপূর্ণ থাকে, অস্থিতিশীল পরিবেশ যেন না থাকে এবং সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কারণ অবৈধ অস্ত্রধারীরা মানুষকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রভাবিত করে। সেটা না হয়ে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ভোট যাতে এ অঞ্চলে হয় সেই ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

কমিটির সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, পার্বত্য এলাকায় পাড়া মহল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে নীরবে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন । আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন তিনি।

বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী ও বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উ শৈ সিং আশ্বাস দেন যে, পার্বত্য অঞ্চল থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে যা যা প্রয়োজন, তা করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা আমি করে যাবো ।

এছাড়া বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন, ‘পার্বত্য বান্দরবানে বর্তমানে বিভিন্ন দল-উপদলের কারণে পাড়া মহল্লায় মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত রয়েছে । বিগত পাঁচ বছরে এখানে বিনা বিচারে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র যেন দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

এদিকে বিগত বৈঠকে পাহাড়ি উগ্রবাদী সংগঠন কুকি চীনের (কেএনএফ) বিষয়ে কথা বলা হয়। বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা কেএনএফ নামে সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে সংগঠনটি পরিচিতি লাভ করেছে। সংগঠনটি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের সঙ্গে জড়িত থাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

কেএনএফের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য বান্দরবান জেলা পরিষদের একটি লিয়াজোঁ কমিটি আছে বলে জানা গেছে। ওই কমিটি এখন পর্যন্ত জুমে দুটি বৈঠক করেছে। সামনে সরাসরি বৈঠক করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বৈঠকের বিষয়ে কিছু শর্ত কেএনএফ দিয়েছে। যার মধ্যে দুটো সেনাক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার কথা তারা বলেছে। তবে জেলা পরিষদ সেটাতে সায় দেয়নি।

বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন, ‘তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য সরাসরি বৈঠকের জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী দুই একদিনের মধ্যে বৈঠকের তারিখ জানা যাবে।’

বৈঠকে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ভবনের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু করতে না পারায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি দবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন, কমিটির সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, দীপংকর তালুকদার, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, বাসন্তী চাকমা এবং নোমান আল মাহমুদ প্রমুখ।

Exit mobile version