parbattanews

জুমিয়াদের সোনালী ফসলে মিষ্টি হাসি

জুমের ধান পাকতে শুরু করায় ফসল ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জুমিয়ারা

বান্দরবানের থানচিতে সোনালী ফসল উৎপাদনে মিষ্টি হাসি হাসলেন মেনরোয়া পাড়া বাসিন্দা জুমিয়া মেনথাং ম্রো (৪০)। চলতি মৌসুমে থানচি বান্দরবান সড়কের পাশের ৫ হাঁড়ি ধান চাষ করেন তিনি। তিনি আশা করছেন এবারেও ভালো ফলন ও পরিবারে বাৎসরিক খোরাগ তুলতে পারবেন এবং পরিবার পরিজন নিয়ে মানসম্মতভাবে বসবাস করবেন।

পাহাড়ে জুমের ধান কাটতে শুরু করে দিয়েছে জুমিয়ারা। এই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। প্রায় চার মাসের পরিচর্যায় এখন জুমের ধান পাকতে শুরু করায় ফসল ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলায় বলিপাড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সুংথাং খুমি পাড়া, ক্যচু মারমা পাড়া, জনেরাম ত্রিপুরা পাড়া ও ব্রম্মদত্ত চাকমা পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে জুমের ধান কাটা শুরু করলেও সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই জুমের ফসল তোলা নিয়ে জুমিয়া পরিবারগুলো এখন ধান কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন।

ধান ছাড়া তিল, ভূট্টা, মরিচ, মারফা, বেগুন, হলুদ, আদাসহ জুমের অন্যান্য ফসল উত্তোলন করে স্থানীয় বাজারে নায্যমূল্যে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। বেশীর ভাগ জুমিয়া জুমের মাচাং ঘরে অবস্থান করছেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ২৭০০ হেক্টর উঁচু  নিচু পাহাড়ি জমিতে থানচি উপজেলায় ৩ হাজার ৬ শত ৩৯ জন জুম চাষী জুম চাষ করছেন। কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৫ হাজার ৪শত মেঃটন ধান উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছেন।

তিন্দু ইউপি চেয়ারমান মংপ্রুঅং মারমার মতে, জুম চাষ এক ধরণের পাহাড় অঞ্চলের স্থানান্তর কৃষি পদ্ধতি, যা জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে পাহাড়কে চাষের উপযোগী করার মাধ্যমে যে চাষ করা হয় তারই নাম জুম চাষ।

দেশের তিন পার্বত্য অঞ্চলে ৩৫ হাজারেও বেশী পাহাড়ি মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র আদিম ও প্রধান উৎস হল জুম চাষ। বছর শুরুতেই জানুয়ারি মাস হতে সুবিধাজনক স্থান নির্বাচন করে জুমের জঙ্গল কাটা শুরু হয়। এপ্রিল মাসের শুরুতেই জঙ্গল পুড়িয়ে পরিস্কার করে ধান লাগানোর উপযোগি করে গড়ে তোলে।

এপ্রিল-মে মাসের মধ্যেই জুমের ধান লাগিয়ে দিতে হয়। তারপর জাত (সাদা-লাল চাল) ভেদে আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর জুমের ফসল তোলার উপযোগি হতে শুরু করলে জুমের পাকা ধান কেটে ফসল ঘরে তোলা শুরু করে জুমিয়ারা।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, কৃষি বিভাগের বান্দরবান জেলা অফিসার ডিডি স্যারের নির্দেশ এর উপসহকারী কৃষি অফিসারগন নিজ নিজ দায়িত্বরত এলাকায় কৃষকদের সাথে সমন্বয়ে সরকারিভাবে যাবতীয় এবং প্রয়োজনীয় কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

তাদের শ্রমে চলতি বছরে থানচির উপজেলা জুমের ধান লক্ষ্যমাত্রা পৌছানো সম্ভব হবে বলে তিনি শতভাগ আশাবাদী ।

Exit mobile version